E-Paper

‘লক্ষ্ণণরেখা’ পেরিয়েই দুর্ঘটনায় লোকাল

এই দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দেয় গত বছর ৩০ নভেম্বর শিয়ালদহ স্টেশনের অদূরে রানাঘাট লোকালের দুর্ঘটনার কথা। সংঘর্ষ হয়েছিল পাশাপাশি দুটি লাইনে একই দিকে ধাবমান দুটি ট্রেনের মধ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৩ ১০:০১
লাইন থেকে ট্রেনের কামরা তোলা হচ্ছে শক্তিগড়ে। নিজস্ব চিত্র

লাইন থেকে ট্রেনের কামরা তোলা হচ্ছে শক্তিগড়ে। নিজস্ব চিত্র

সিগন্যাল না দেখে দ্রুত গতিতে যেতে গিয়েই শক্তিগড়ের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছে বর্ধমান-ব্যান্ডেল লোকাল, এমনটাই মনে করছেন পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের কর্তারা। চালকের গাফিলতিতেই দুর্ঘটনা কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। বৃহস্পতিবার পূর্ব রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা শক্তিগড়ের দুর্ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেন। ওই দলে থাকা হাওড়া ডিভিশনের আধিকারিক (প্রচার) উৎপল দত্ত বলেন, ‘‘পুরোটাই প্রযুক্তিগত ব্যাপার। তদন্ত শেষ হলেই কী হয়েছিল বোঝা যাবে।’’ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ব্যান্ডেল লোকালের চালক বি কে বর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত করা হচ্ছে।

এই দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দেয় গত বছর ৩০ নভেম্বর শিয়ালদহ স্টেশনের অদূরে রানাঘাট লোকালের দুর্ঘটনার কথা। সংঘর্ষ হয়েছিল পাশাপাশি দুটি লাইনে একই দিকে ধাবমান দুটি ট্রেনের মধ্যে। সিগন্যাল, ‘ফাউলিং মার্ক’ উপেক্ষা করে কারশেডগামী ট্রেন এগিয়ে যেতেই লোকালের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। রানাঘাট লোকালের চারটি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারশেডগামী লোকাল লাইনচ্যুত হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন যাত্রীরা।

শক্তিগড় থেকে হাওড়া যাওয়ার মেন ও কর্ড লাইন ভাগ হয়ে যায়। এ দিন ৩৭৭৮৪ নম্বরের ডাউন বর্ধমান-ব্যান্ডেল লোকাল ব্যান্ডেলের দিকে যাওয়ার পথে শক্তিগড় স্টেশনে ঢোকার মুখে ৯টা ১৬মিনিট নাগাদ ওই দুর্ঘটনা ঘটে। লোকাল ট্রেনটি যে লাইনে ছিল তার পাশের লাইনেই একটি খনিজ তেলের ট্যাঙ্কারবাহী মালগাড়ি। অভিযোগ, ডাউন ব্যান্ডেল লোকালের চালক প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগে সিগন্যাল উপেক্ষা করেন। একই সঙ্গে ফাউলিং মার্কও (যে দাগ উপেক্ষা করলে দুর্ঘটনা অনিবার্য) পেরিয়ে যান। দুটি লাইন পাশাপাশি এগিয়ে যেখানে জুড়ে যায় তার অন্তত ১৫ মিটার আগে ওই ইংরেজি হরফে ‘এফ এম’ লেখা থাকে। দিনে রাতে ওই লেখা যাতে চালকদের চোখে পড়ে তা নিশ্চিত করতে উজ্জ্বল রং দিয়ে লেখা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যান্ডেল লোকালের চালক সিগন্যাল না থাকার পরেও এগিয়ে যেতেই মালগাড়ির সঙ্গে ঘষা লাগে বলে অভিযোগ। যাত্রিবাহী লোকাল ট্রেনের দুটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। রাতের ট্রেন প্রায় ফাঁকা থাকায় ও গতি কম থাকায় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়নি বা কেউ আহত হননি। মালগাড়ির চার ও পাঁচ নম্বর ট্যাঙ্কার লাইনচ্যুত হয়। প্রায় ৮০ মিটার ট্র্যাকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, সিগন্যাল অতিক্রম করে যাওয়াতেই দুর্ঘটনা ঘটে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

বুধবার রাতেই শক্তিগড়ে আসেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অমরপ্রকাশ দ্বিবেদি ও ডিআরএম (হাওড়া) মণীশ জৈন। রাতেই ট্রেনের চালক এবং গার্ডকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। লিখিত বয়ান নেওয়া হয়। চালকের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। ডাউন লাইন পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে যায়। রেলের দাবি, রাতভর কাজ করার পরে ১২ ঘণ্টা পরে ডাউন লাইন দিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টা ১০ নাগাদ একটি এক্সপ্রেস ট্রেন যায়। লোকাল যায় তারও দু’ঘণ্টা পরে। দেরির কারণ নিয়ে রেলের দাবি, বিদ্যুতের তার থাকায় ক্রেন ব্যবহার করা যায়নি। পুরনো পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কামরা বিচ্ছিন্ন করে ওভারহেড কেবল সরিয়ে কামরাগুলি সরানো হয়। চাকাও ভেঙে গিয়েছিল। সেগুলি সারিয়ে কামরা তুলতে গিয়ে দেরি হয়। তবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত লাইনটি বিকেল পর্যন্ত পুরো সারানো যায়নি। ওই জায়গায় গতি কমিয়ে চালানো হচ্ছে ট্রেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman Bandel Local Derailed Shaktigarh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy