Advertisement
E-Paper

রাস্তা নিয়ে বিবাদের জেরে বর্ধমানে একটি পরিবারকে ‘সামাজিক বয়কট’! অভিযোগ মানেনি তৃণমূল

পাড়ায় ঢোকার রাস্তা তৈরি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদ চলছিল। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ তাতে হস্তক্ষেপ করে একটি পরিবারকে রাস্তা তৈরির নিদান দেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৬
image of road

এই রাস্তাকে কেন্দ্র করে বিবাদ। — নিজস্ব চিত্র।

সামাজিক বয়কট! তা-ও আবার শহরে। রাস্তা তৈরি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদের জেরে একটি পরিবারকে ‘সামাজিক বয়কট’-এর ডাক। অভিযোগ, এর নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের একাংশ। মেমারি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। তৃণমূল যদিও সামাজিক বয়কটের কথা অস্বীকার করেছে।

পাড়ায় ঢোকার রাস্তা তৈরি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদ চলছিল। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ তাতে হস্তক্ষেপ করে একটি পরিবারকে রাস্তা তৈরির নিদান দেয়। অন্য পরিবারের লোকজন তা মানতে না চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। তাতেই ‘ক্ষুব্ধ’ শাসকদলের একাংশ। অভিযোগ, তাঁরা ওই পরিবারকে সামাজিক বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এমনকি, এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ ওই পরিবারকে কোনও রকম সহযোগিতা না করে।

ধান কাটার মরসুম চলছে। অভিযোগ, ওই পরিবারের জমিতে কোনও শ্রমিক কাজ করতে পারবেন না বলে ফতোয়া দিয়েছে শাসকদলের একাংশ। ফলে জমিতেই পড়ে আছে ধান। ওই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, শ্রমিকেরা ভয়ে কাজ করতে আসছেন না। এমনকি, এলাকার বাসিন্দাদের তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্য সেলিমা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের জায়গার উপরে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল। আমরা তা মানতে চাইনি। সেই কারণে আমাদের উপর আগেও আক্রমণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী আমাদের বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে হুমকি দেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। প্রতিবাদ করলে আমাদের মারধর করা হয়। আমাদের পরিবারও তৃণমূলের সমর্থক। তার পরেও আমাদের সঙ্গে এমন করা হচ্ছে।’’ তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর কাশ্মীরা খাতুন শেখ এবং তাঁর স্বামী সুরমান আলির নির্দেশে এ সব করা হচ্ছে। সেলিমা বেগমের স্বামী সেখ আজিজুল হক বলেন, ‘‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝামেলায় নেতারা অকারণে মাথা ঘামাচ্ছেন। যাঁদের জন্য রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তারা কাউন্সিলরের অনুগামী। তাই কাউন্সিলর তাঁর দলবল নিয়ে এসে ফতোয়া জারি করেছেন।’’ কাউন্সিলরের অনুগামীরা খুন করার হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন আজিজুল।

যে পরিবারের সঙ্গে আজিজুলদের জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছে, সেই পরিবার সামাজিক বয়কটের কথা অস্বীকার করেছেন। পরিবারের সদস্য সবুরআলি শেখ বলেন, ‘‘ওই পরিবারটির সঙ্গে গ্রামের কারও সম্পর্ক ভাল নয়। তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটি রাস্তা গিয়েছে। আমাদের সঙ্গে গন্ডগোল হওয়ার জন্য তিনি রাস্তাটি কেটে দেন। তা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য বলেছিলাম। ওঁরা আমাদের কথার গুরুত্ব দেননি। উল্টে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে গোটা পাড়ার লোকজন বীতশ্রদ্ধ। তবে কেউ সামাজিক বয়কট করেনি।’’

মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানোয়ার হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘শাসকদলের কাউন্সিলরের দ্বারা এই ধরনের ঘটনা খুবই লজ্জাজনক এবং অন্যায় কাজ। ওই পরিবার তৃণমূলের সমর্থক, মিটিং-মিছিলে যায়। আমি বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেমারি পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাশ্মীরা খাতুন শেখ। তিনি বলেন, ‘‘ওই পরিবারকে একাধিক বার রাস্তার সমস্যা মেটানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই পরিবার কোনও ভাবেই আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি। রাস্তার সমস্যার জন্য পিছনের বাড়িগুলির অসুবিধা হচ্ছিল, আমরা রাস্তা করে দিয়েছি।’’ তবে সামাজিক বয়কটের বিষয়টি অস্বীকার করেন কাউন্সিলর। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘স্থানীয় দুই পরিবারের মধ্যে গন্ডগোল রয়েছে শুনেছি। তাঁরা আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল কাউকে সামাজিক বয়কট করে না।’’

Social Boycott TMC East Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy