জেলায় পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কালনা ২ এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকে তৈরি হয়েছে ৪০ মেট্রিক টনের দু’টি পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র। কৃষি বিপণন দফতর এবং নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির উদ্যোগে বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি কেন্দ্র দু’টিতে এ বছর থেকেই পেঁয়াজ সংরক্ষণ শুরু হবে। সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও তার লাভ চাষিরা পান না। সংরক্ষণ কেন্দ্র চালু হলে তাঁরা উপকৃত হবেন, দাবি প্রশাসনের।
কালনা মহকুমায় ছ’হাজার হেক্টর জমি-সহ শীতকালে জেলায় প্রায় ৭৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়। উদ্যান পালন দফতর ভর্তুকিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ছোট গোলা তৈরিতে উৎসাহ দেয়। তবে তাতে স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ রাখা যায় স্বল্প সময়ের জন্য। জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা ২ এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের কিসান মান্ডিতে সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে খরচ হয়েছে যথাক্রমে ১৯,৪০,১৬৫ টাকা ও ১৯,৩৯,৫৩৬ টাকা। ইটের ঘর এবং রঙিন টিনের ছাউনি দেওয়া কেন্দ্রগুলিতে হাওয়া বাতাস চলাচলের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। পেঁয়াজ বিভিন্ন স্তরে ঝুলিয়ে রাখতে লোহার খাঁচা করা হয়েছে।
উদ্যান পালন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘গ্রামে অনেকেই কাঠের একই ধরনের খাঁচা তৈরি করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে এনে অনেকেই সংরক্ষণ কেন্দ্রে পেঁয়াজ রেখেছিলেন আগে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল কেজি প্রতি ১৬ টাকা। সেই পেঁয়াজ তাঁরা সরকারকে বিক্রি করেছিলেন ৪৪ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সুফল বাংলা স্টলে।’’ কালনার সর্বমঙ্গলা এলাকায় অরুণ পাল নামে এক চাষি পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়েছিলেন। উদ্যান পালন দফতরের সচিব ওঙ্কার সিংহ মিনা সেটি পরিদর্শন করেন। এক আধিকারিক জানান, অনেকটা ওই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কেন্দ্র দু’টি তৈরি করা হয়েছে। ছ’-সাত মাস কেন্দ্র দু’টিতে সংরক্ষণ করা যাবে পেঁয়াজ।
চলতি বছর থেকে কেন্দ্র দু’টিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ নিয়ে দু’টি ব্লকে বৈঠকও হয়েছে। পাইলট প্রজেক্ট সফল হলে এই ধরনের আরও কেন্দ্র ভর্তুকি দিয়ে গড়ার কথা ভাবা হবে। সংরক্ষণ কেন্দ্র বাড়লে মজুত বাড়বে। এতে পেঁয়াজের জন্য নাসিকের উপরে নির্ভরতা যেমন কমবে, তেমনই সংরক্ষণের সুবিধা থাকলে চাষিরাও লাভজনক দাম পাবেন।
উদ্যান পালন বিশেষজ্ঞ পলাশ সাঁতরা বলেন, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি- সহ বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজের এই ধরনের সংরক্ষণ কেন্দ্র হচ্ছে। এটা অনেকটা আলুর হিমঘরের মতো। ছোট চাষিরা এই কেন্দ্রগুলিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। কাছাকাছি সুফল বাংলা স্টলে পেঁয়াজ পৌঁছে দেওয়াও সহজ হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)