Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Bangla Awas Yojana

প্রকল্পের ঘরে কার্যালয় চলায় সরব বিরোধীরা

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ প্রকল্পে ঘর তৈরির জন্য এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুদান পান শঙ্কর মাঝি।

বিতর্কের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

বিতর্কের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩৬
Share: Save:

নীল-সাদা বাড়ির গায়ে সরকারি প্রকল্প ‘আবাস যোজনা’র খতিয়ান লিখে দিয়েছিল পঞ্চায়েত। বাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়েছিল উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির হাতে। তার পরেও কী করে দেওয়াল থেকে সেই সরকারি তথ্য মুছে ঘরটি দলের অফিস হিসেবে ব্যবহার করলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা, প্রশাসনই বা এত দিন ‘চুপ’ রইল কেন, জামালপুরে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। জামালপুরের কাঠুরিয়া গ্রামে আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে এই বিতর্কে দলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলও।

তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, “দলে কেউ অন্যায় করলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুথ স্তর থেকে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রেও দলের কেউ যুক্ত রয়েছেন বলে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ প্রকল্পে ঘর তৈরির জন্য এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুদান পান শঙ্কর মাঝি। ঘর তৈরির পরে শঙ্করকে সামনে রেখে ছবিও ‘আপলোড’ করা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই বাড়ি দখল করে দলীয় কার্যালয় ‘উন্নয়ন ভবন’ চালু করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের তিন বারের সদস্য মিতালি সাঁতরার স্বামী রামরঞ্জন সাঁতরা। বিতর্কের মধ্যেই ওই ঘরে বসে তাঁর দাবি, “এটি তৃণমূলের কার্যালয়। পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর সংসদের মানুষজন নানা কাজে আসেন। দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্লক সভাপতি থেকে উচ্চ নেতৃত্বেরাও জানেন। এখন আবাস প্রকল্পের ঘর বলে আমার উপরে দোষ চাপালে তো হবে না!”

উপভোক্তা শঙ্করের মৃত্যু হয়েছে বছরখানেক আগে। অভিযোগ, তাঁর পরিবার এখন দামোদরের বাঁধের কাছে অস্থায়ী আচ্ছাদনের একটি ঘরে বাস করে। সেই ঘরের গায়ে এখন আবাস প্রকল্পের নাম লিখে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে তৈরি পাকা ঘরের দেওয়াল থেকে আবাস যোজনার তথ্য মুছে দেওয়া হল কেন? রামরঞ্জনের দাবি, “২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে হঠাৎ বিজেপির উত্থান হয়। পঞ্চায়েতে আবাস প্রকল্প নিয়ে হামলা চালায়। তার পরেই দলীয় কার্যালয়কে আবাস প্রকল্প বলে লিখে দেওয়া হয়। কী ভাবে ওই লেখা মুছল, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্বই বলবেন।’’

ওই ব্লকের বাসিন্দা, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমর ঘোষ বলেন, ‘‘সংগঠিত ভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে! উপভোক্তার পরিবারকে বাড়ি ফিরিয়ে না দেওয়া হলে গ্রামবাসীই এগিয়ে আসবেন।’’ বিজেপির যুব মোর্চার জামালপুরের আহ্বায়ক অজয় ডোকালের দাবি, “সরকারি প্রকল্পের একটি বাড়ি নিয়ে এত বড় দুর্নীতি হয়ে গেল, প্রশাসন-পঞ্চায়েত সবাই চুপ! প্রত্যেকেরই মদত রয়েছে।’’

জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উদয় দাস শুধু বলেন, ‘‘আমার কিছু বলার নেই। ব্লক স্তর থেকে তদন্ত হচ্ছে।’’ জামালপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেহেমুদ খানের দাবি, ‘‘দলের কারও দোষ থাকলে, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্লক প্রশাসনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangla Awas Yojana TMC Jamalpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE