Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
Pradhan Mantri Aawas Yojna

কাঁচা বাড়ি, প্রধান তবু নেবেন না প্রকল্পের টাকা

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁদু থাকেন মাটির বাড়িতে। বাড়ির চাল অ্যাসবেস্টসের। জল পড়ায় তাতে ত্রিপলের আচ্ছাদন দেওয়া হয়েছে।

এই ঘরেই বাস প্রধান চাঁদু সিংহের। নিজস্ব চিত্র

এই ঘরেই বাস প্রধান চাঁদু সিংহের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়না, গলসি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:০৫
Share: Save:

পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও অনেক তৃণমূল নেতা-নেত্রী বা তাঁদের পরিজনের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়, একের পরে এক এরকম অভিযোগ উঠছে জেলায়। তারই মধ্যে একটি অন্য ছবি ধরা পড়ল রায়নায়। মাটির বাড়িতে বাস করা সত্ত্বেও আবাস যোজনার তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দিয়েছেন নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চাঁদু সিংহ।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁদু থাকেন মাটির বাড়িতে। বাড়ির চাল অ্যাসবেস্টসের। জল পড়ায় তাতে ত্রিপলের আচ্ছাদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি অনুদানে বাড়ি নিতে অস্বীকার করছেন কেন? পেশায় দিনমজুর চাঁদু বলেন, ‘‘আমার তো তবু মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে, অনেকের তো সেটাও নেই। আবার অনেকের নাম বাদ পড়েছে। সেখানে এক জন জনপ্রতিনিধি হয়ে কী ভাবে সরকারি অনুদানে বাড়ি নেব?’’ তাই তিনি নিজেই পঞ্চায়েতের তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়েছেন বলে জানান।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই পঞ্চায়েতের ২,৯০০ জনের নাম এসেছিল আবাস যোজনার তালিকায়। সমীক্ষার পরে ১,৪২৫ জন বাড়ি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হয়েছে। এই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ইসমাইল শেখের পাকা বাড়ি। তার পরেও তাঁর বাবার নাম আবাস যোজনার তালিকায় ছিল। কয়েক দিন আগে তিনি প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে তালিকা থেকে বাবার নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেন। তাঁর শ্বশুরের নামও ছিল তালিকায়। তিনিও বাড়ি চান না বলে প্রশাসনকে জানিয়েছেন। চাঁদুর বাড়ি না নেওয়া প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিদের একটা দায়িত্ব থাকে। তিনি সে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শকেও কর্তব্য মনে করেছেন।’’

যদিও গলসিতে প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে একই রকম অভিযোগ উঠেছে। বড় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সরকারি প্রকল্পে বাড়ির তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন উপপ্রধান তথা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলের, অভিযোগ উঠেছে গলসি ১ ব্লকের উচ্চগ্রাম পঞ্চায়েতে। পঞ্চায়েতের আরও এক সদস্যেরও নাম রয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

পারাজ স্টেশন লাগোয়া এলাকায় বাড়ি কোলকোলের ১ নম্বর সংসদের সদস্য দুলালি বাউড়ির। তিনি গত পঞ্চায়েত বোর্ডে উপপ্রধান ছিলেন। তাঁর স্বামী সনাতন বাউড়ি অন্ডালে রেলপুলিশে কর্মরত। বাড়ির সামনে গ্যারাজ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাস প্রকল্পে উপভোক্তার তালিকায় নাম রয়েছে দুলালির বড় ছেলে সোমনাথের। সে কথা স্বীকারও করছেন দুলালি। তাঁর দাবি, ‘‘আমার স্বামী পুলিশে চাকরি করেন। ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি। যখন বাড়ি ছিল না, তখন দলের নেতারা আমার ছেলের নাম পাঠিয়েছিলেন, যাতে একটা বাড়ি পাওয়া যায়। আমি কোনও দিন সুপারিশ করিনি। এখন বাড়ি হয়েছে, তাই প্রকল্পের বাড়ি নেব না।” ওই গ্রামেরই ২ নম্বর সংসদের সদস্য সুভাষ মেটেরও ওই তালিকায় নাম রয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের দাবি, তাঁর একতলা বাড়ি রয়েছে।

বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি রমেন শর্মার অভিযোগ, “তৃণমূলের নেতারা নিজেদের উন্নয়ন করছেন। তাঁদের সময়ে গরিবেরা বঞ্চিত। অনেক এলাকায় নেতাদের পুরো পরিবারের নাম রয়েছে।’’ ইতিমধ্যে সোমনাথের নাম উপভোক্তার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও (গলসি ১) দেবলীনা দাস। তিনি বলেন, “ব্লকের তালিকা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। অনেকেই বাদ গিয়েছেন। উচ্চগ্রামের সোমনাথ আর সুভাষ মেটের নাম ইতিমধ্যে বাদ দেওয়া হয়েছে।”

তৃণমূলের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েত স্তরে দলের একাংশের কাজকর্মে দলের ক্ষতি হচ্ছে। গলসি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রকম হলে অবশ্যই তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে। আমরা চাই, ঠিক উপভোক্তরা বাড়ি পান।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.