Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
দুর্যোগের পুজো
Flood Situation in West Bengal

দামোদরের সঙ্গে দড়ি টানাটানি করেই বেঁচে থাকা

জামালপুরের শিয়ালি আর কোঁড়া, গ্রাম দু’টিকে যেন নিংড়ে নিচ্ছে দামোদর। আজ ঘরবাড়ি আছে। কাল হয়তো সব গিলে নেবে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ। নিম্ন দামোদর এলাকায় বন্যা আর ভাঙন একসঙ্গেই হয়।

বৃষ্টিতে দামোদরে বেড়েছে জল। নৌকা থেকে নেমে জল পেরিয়ে যাতায়াত।জামালপুরের শম্ভুপুর ঘাটে। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস

বৃষ্টিতে দামোদরে বেড়েছে জল। নৌকা থেকে নেমে জল পেরিয়ে যাতায়াত।জামালপুরের শম্ভুপুর ঘাটে। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস

সৌমেন দত্ত
জামালপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৩৬
Share: Save:

একটা ছেঁড়া, রংচটা ছবি হাতে নিয়ে এলেন মামনি বাগ। ছবিতে শুধুই দুর্গা। দেবীর ছেলেমেয়েরা কোথায় গেল? মামনি বলেন, ‘‘দামোদরের জলে আমাদের ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। মায়ের ছেলেপুলেও...। বন্যার জলে ছবিটা একেবারে নষ্ট হয়ে ছিঁড়ে গিয়েছে।’’

জামালপুরের শিয়ালি আর কোঁড়া, গ্রাম দু’টিকে যেন নিংড়ে নিচ্ছে দামোদর। আজ ঘরবাড়ি আছে। কাল হয়তো সব গিলে নেবে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ। নিম্ন দামোদর এলাকায় বন্যা আর ভাঙন একসঙ্গেই হয়। ভাঙনের ফলে অনেকের চাষযোগ্য জমিও জলের তলায় চলে গিয়েছে। বৃদ্ধা ফুলটুসি মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাঙন আর বন্যার সঙ্গেই আমাদের বাস। নিরাপদ আশ্রয় গড়তেই বছর কেটে যায়। আবার কোন বছর ঠাঁইটুকু হারিয়েও যায়। আমাদের পুজো না থাকারই মতো।’’ সদ্য কলেজে ওঠা এক তরুণীর কথায় উঠে আসে আরজি করের ঘটনার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘ওই তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে যা যা সামনে এসেছে তাতে কারও মন, মেজাজ ভাল থাকার কথা নয়। কাশফুলও যেন ফিকে লাগছিল। তার উপরে দামোদরের জল ঢুকে সব আনন্দে একেবারে জল ঢেলে দিয়েছে।’’

মামনিদের বাড়িও জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জমি জলের তলায়। আমন ধান পচে যাচ্ছে। আনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মামনির কথায়, ‘‘দামোদরের বাঁধের উপরে ত্রিপল খাটিয়ে কয়েক দিন ছিলাম। বাড়ি ফিরে এসে দেখি, মাটির দেওয়াল ধসে গিয়েছে। এখন সেই দেওয়াল তৈরির কাজ চলছে। পুরো বাড়ি তৈরির আর্থিক সংস্থান তো আমাদের নেই।”

ছিঁটেবেড়ার দেওয়ালে মাটি দিচ্ছিলেন বাউড়ি পাড়ার বাবলু বাউড়ি। মাঝে উঠে এক বার শক্ত করে বাঁধলেন ত্রিপলটা। চোখে-মুখ থেকে আতঙ্ক কাটেনি তখনও। তাঁর কথায়, “আবহাওয়া খারাপ ছিল। তার মধ্যে হঠাৎ করে দামোদর অশান্ত হয়ে উঠল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দামোদরের জল হু হু করে বাড়িতে ঢুকে পড়ল।” পাশে দাঁড়ানো রবি বাউড়ি বলেন, “জমির উপরে নির্ভর করেই আমাদের চলে। সারা বছর কিছু কিছু জমিয়ে নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়। বন্যার জল ঢুকে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফসল পাওয়াটাও চিন্তার। থাকার জায়গাও দরকার। পুজোর কথা ভাবতে পারছি না।’’

ভাঙা ঘরে কোনও মতে মাটি দিয়ে বাবা-মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে দিন কাটছে সম্রাট কোঁড়ার। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বন্যায় সব গিয়েছে। পুজোর আনন্দ বলে কিছু নেই। সরকারি ক্ষতিপূরণ তাড়াতাড়ি পেলে বাচ্চাটাকে নিয়ে একটা নিরাপদ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাব।” মেনকা বাগ, কল্পনা বাউরি, ফুলেশ্বরী বাউড়িরা বলেন, “কালকে কী খাব, তা জানি না। ভাঙা ঘরেই বাস করতে হচ্ছে। আমাদের কাছে পুজো বিলাসিতা। আমাদের প্রার্থনা, একটা স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা যেন হয়।”

দেবীর কাছে প্রার্থনা, এ বারে ঘর মিললে আর যেন না ধুয়ে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Damodar River flood Durga Puja 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE