E-Paper

পুজোর অধিকার চান দাসেরা, চিঠি প্রশাসনকে 

ইতিমধ্যেই তাঁদের সংগঠনের তরফে জেলাশাসক ও মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

প্রণব দেবনাথ

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫১
কাটোয়া চন্দ্রপুরের ধর্মরাজ মন্দির।

কাটোয়া চন্দ্রপুরের ধর্মরাজ মন্দির। নিজস্ব চিত্র।

দাস সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ধর্মরাজ মন্দিরে ‘উঠতে’ দেওয়া হয় না। চৈত্র মাসে শিবের গাজনেও তাঁদের বিশেষ পুজো থেকে ‘বঞ্চিত’ করে রাখা হয়। এমনই অভিযোগ কাটোয়ার চন্দ্রপুর গ্রামের দাস সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের। প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে তাঁদের পাশের গ্রাম গিধগ্রামে গিধেশ্বর মন্দিরে দাস সম্প্রদায়ের মানুষকে পুজো দেওয়ার অধিকার পাইয়ে দিয়েছেন। চন্দ্রপুর গ্রামের ধর্মরাজের মন্দিরের ক্ষেত্রেও প্রশাসন একই পদক্ষেপ করুক, চাইছেন এই গ্রামের দাস সম্প্রদায়ের মানুষজন।

ইতিমধ্যেই তাঁদের সংগঠনের তরফে জেলাশাসক ও মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যদিও ওই মন্দিরের সেবায়েত থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রামবাসী, কেউই দাস সম্প্রদায়ের দাবি স্বেচ্ছায় মানবেন না বলে সাফ জানিয়ে প্রশাসনের কোর্টে বল ঠেলেছেন। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, “চন্দ্রপুর গ্রামে ধর্মরাজ মন্দিরের বিষয়টি স্থানীয় স্তরে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” সম্প্রতি ধর্মরাজ মন্দিরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পুজো দেওয়ার পরে মূল গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ রয়েছে। সামনে টিনের চালার নাটমন্দিরে গ্রামের কয়েক জন প্রবীণ বাসিন্দা বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেন মন্দিরে দাস সম্প্রদায়ের মানুষকে উঠতে দেওয়া হয় না, জানতে চাইতেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তাঁরা। কিছু ক্ষণ পরে পাড়ার অনেক বাসিন্দা মন্দির চত্বরে জড়ো হন। প্রায় সকলেই সমস্বরে জানিয়ে দেন, প্রাচীন এই রীতির পরিবর্তন হবে না। প্রশাসন জোর করলে মন্দিরে পুজো দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।

কাটোয়া থানা ও মঙ্গলকোট বিধানসভার অধীনে থাকা চন্দ্রপুর প্রাচীন একটি জনপদ। গ্রামে প্রচুর মানুষের বাস। ধর্মরাজ মন্দির গ্রামবাসীর কাছে পবিত্র স্থান। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে অনুষ্ঠান হয়। চৈত্রে শিবের গাজনের সময়ে সবথেকে বেশি জাঁকজমক করে পুজো দেওয়া হয়। হয় অনুষ্ঠানও। পুজোয় গ্রামের সকলের যোগ দেওয়ার অধিকার থাকলেও দাস সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের পুজো দিতে ও গাজনের সন্ন্যাসী হতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। এমনকী, গাজনের সময়ে শিলারূপী প্রতিমাকে গ্রামে ঘোরানোর সময়ে সকলের বাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়া হলেও দাসপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় না। প্রথার নামে এই অবমাননার অবসান চাইছেন দাস সম্প্রদায়ের মানুষ।

দাসপাড়ার বাসিন্দা স্বপন দাস, পার্বতী দাস বলেন, “ধর্মরাজ সকলের। মন্দিরে গ্রামের সবাই পুজোয় যোগ দেন, গাজনে আনন্দ করেন। অথচ ৩০০ বছরের একটি প্রথার নামে আমাদের মন্দিরে উঠতে দেওয়া হয় না। এতে গ্রামে আমরা হীনমন্যতায় ভুগি। আমরাও সমান অধিকার চাই। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেছি। গিধগ্রামের মতো আমাদেরও মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার পাইয়ে দেওয়া উচিত প্রশাসনের।”

চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী মাঝি, মণিষা শীট বলেন, “আমাদের মন্দিরে কোনওদিনই দাস সম্প্রদায়ের লোকজন পুজো দেন না। প্রাচীন এই রীতি বদলে যাক, আমরা তা চাই না। প্রশাসনকে বলব, জোর করে নিয়ম বদলে দিলে পুজোর দায়িত্ব থেকে গ্রামবাসী সরে যাবেন।”

ধর্মরাজ মন্দিরের সেবায়েত নন্টু মাঝি বলেন, “জমিদারদের লিখিত নির্দেশই রয়েছে, গ্রামের অন্যেরা মন্দিরে পুজো ও গাজনে যোগ দিতে পারলেও দাসেরা পারবে না। আমরা সেই নিয়ম বদলে দিতে পারি না। প্রশাসন যা ভাল
বোঝে করবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Katwa

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy