পাড়ায় তেমন কোনও বদনাম নেই। গরিব মা-মেয়েক ‘আপাত নিরীহ’ বলেই জানতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা যে দিনেদুপুরে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি করে নিয়ে আসতে পারেন, বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রতিবেশীদের অনেকেই। কারও কারও ধারণা, নিজের সন্তান না থাকায়, অন্যের শিশুপুত্র নিয়ে চলে এসেছিল মেয়েটি। অভিযুক্ত মা-মেয়েকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে বীরভূমের এক পরিবার ১৮ দিনের শিশুকে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসে। শিশুটির বাবা সুজল শেখ ওষুধ কিনতে গেলে প্রসূতি বিভাগের বহির্বিভাগে বসেছিলেন তার মা ও দিদিমা। অভিযোগ, এক মহিলা গল্প জোড়েন তাঁদের সঙ্গে। তার পরে শিশুটিকে আদর করার অছিলায় কোলে নিয়ে চম্পট দেন। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে অভিযোগ করে ওই পরিবার। সিসিটিভি দেখে খোঁজ শুরু হয়। রাত ৯টা নাগাদ বর্ধমান শহর লাগোয়া খাগড়াগড় এলাকা থেকে ওই শিশুটি-সহ দুই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়।
বর্ধমান হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযুক্তমহিলা দাবি করেন, সন্তানটি তাঁর। কিন্তু হাসপাতালে এনে শারীরিক পরীক্ষার পরে দেখা যায়, তাঁর সন্তান হয়নি। তার পরেই তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করে।’’
বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত রুমকি খাতুনের বয়স বছর কুড়ি। মা মিনিরা বিবির সঙ্গে খাগড়াগড়ের উত্তরপাড়ায় থাকতেন তিনি। রুমকির বিয়ে হয়েছিল বর্ধমান ১ ব্লকের বিজয়রামে। সন্তান হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজে শিশুটিকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। শহরের নানা জায়গায় ফুটেজ দেখে মহিলার সন্ধান পায় পুলিশ। ফুটেজ থেকে মহিলার ছবি স্পষ্ট ভাবে উদ্ধার করতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই পড়ুয়ার সাহায্য নেওয়া হয়। যদিও স্থানীয় লোকজনের দাবি, তাঁরাই পুলিশকে খবর দেন।
বুধবার সকালে খাগড়াগড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি বন্ধ। মা-মেয়ে ছাড়া আর কেউ থাকতেন না সেখানে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বুধবার হঠাৎ রুমকি একটি শিশুকে নিয়ে হাজির হন। দাবি করেন, তাঁরই সন্তান। কিন্তু, সন্তান প্রসব হওয়ার দিনেই তিনি বাড়ি এলেন কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির খবরও ছড়ায়। এলাকাবাসীর দাবি, হয়তো সন্তাননা থাকাতেই এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন রুমকি।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান খগেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে মা হওয়ার তীব্র ইচ্ছা, আবেগের কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটতেও পারে। ওই মহিলা কোনও দিন মা হতে পারবেন না, এই রকম কোনও অতীত আছে কি না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’
জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাস বলেন, ‘‘ঘটনার তিন ঘণ্টার মধ্যে শিশুটিকে উদ্ধার করা গিয়েছে। ১৮ দিনের শিশুর শারীরিক দিকটাও আমাদের মাথায় ছিল। তাই দ্রুত উদ্ধার করা একান্ত জরুরি ছিল। আপাতত মা ও শিশুকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)