কয়লা পাচার মামলায় রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি তলব করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব নথি নিজাম প্যালেসে জমা দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও, ফোন ধরেননি মলয়। শুক্রবার রাত পর্যন্ত জবাব মেলেনি মেসেজেরও। বিষয়টি সামনে আসার পরেই, পশ্চিম বর্ধমানের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তরজা। পাশাপাশি, জেলার রাজনীতিতে জল্পনা, লোকসভা ভোটের আগে এই সিবিআই তৎপরতার ফলে পশ্চিম বর্ধমানে কি আদৌ সমস্যায় পড়তে পারে তৃণমূল। দলের নেতারা অবশ্য বিষয়টিতে আমল দিচ্ছেন না।
ঘটনা হল, কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্তে সাম্প্রতিক অতীতে বার বার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআইয়ের নজর গিয়েছে আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয়ের উপরে। মলয়ের বাড়িতে সিবিআইয়ের অভিযান হোক বা অতীতে ইডি-র বার বার মলয়কে তলব সেই সূত্রেই, দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। এ বার সেই ধারাতেই যোগ হল নথি তলব। একটি সূত্রের দাবি, নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে মলয়ের পরিবারের লোকজন না কি জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট নথি জমা
দেওয়া হবে।
তবে, বিষয়টি সামনে আসার পরেই জেলার রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তরজা, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, পশ্চিম বর্ধমান তো বটেই, গোটা দক্ষিণবঙ্গ ও রাজ্য স্তরে মলয় তৃণমূলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বহু বার মন্ত্রী, বিভিন্ন জেলায় দলের পর্যবেক্ষক-সহ নানা দায়িত্ব কৃতিত্বের সঙ্গেই সামলেছেন। তাঁর বিষয়ে লোকসভা ভোটের আগে, সিবিআইয়ের এমন তৎপরতা আদতে কি, দলের নিচুতলার মনোবলে প্রভাব ফেলবে, প্রশ্ন তুলছে জেলার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতদের একাংশ।
বিষয়টিতে একেবারেই আমল দিচ্ছেন না দলের অন্দরে মলয়-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “এ সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। মন্ত্রীর পরিবার চার পুরুষ ধরে আইনজীবী। জেলার রাজনীতিতে তাঁরা উপকারী হিসাবে পরিচিত মুখ। অবশ্যই ওঁরা দাবি করা সব নথি জমা দেবেন।” তাঁর সংযোজন: “এ সবে দলের ভাবমূর্তির বা মনোবলের মোটেও ক্ষতি হয় না।”
বিষয়টি নিয়ে অবশ্য ময়দানে নেমেছে বিরোধীরা। বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, “অনেক আগে মন্ত্রীর জেলে যাওয়া উচিত ছিল। কেন এত দেরি হচ্ছে, জানি না।”
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আশা করি, সিবিআই যে নথি চেয়েছে, মন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা, তা জমা দেবেন। তাঁরা তা জমা দেওয়ার পরে কোনও অসঙ্গতি দেখা দিলে, তখন মন্তব্য করা ঠিক হবে।” বিরোধীদের এ সব বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্রনাথ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)