Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

শৌচালয়ের ঘুলঘুলি ভেঙে বন্দি পালাল থানা থেকে

শৌচালয়ের ঘুলঘুলি ভেঙে চম্পট দিল পুলিশ লক-আপে থাকা জো়ড়া খুনে অভিযুক্ত। মঙ্গলবার ভোরে বর্ধমানের ভাতার থানার ঘটনা। কিন্তু মঙ্গলকোটের ন’পড়া গ্রামের জিয়ার মল্লিকের পালানোর ঘটনা জানাজানি হতেই বিপত্তি। ন’পাড়া থেকে নিহতদের পরিবারের লোকেরা থানায় এসে বিক্ষোভ দেখান।

থানার সামনে চলছে বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র

থানার সামনে চলছে বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

শৌচালয়ের ঘুলঘুলি ভেঙে চম্পট দিল পুলিশ লক-আপে থাকা জো়ড়া খুনে অভিযুক্ত। মঙ্গলবার ভোরে বর্ধমানের ভাতার থানার ঘটনা। কিন্তু মঙ্গলকোটের ন’পড়া গ্রামের জিয়ার মল্লিকের পালানোর ঘটনা জানাজানি হতেই বিপত্তি। ন’পাড়া থেকে নিহতদের পরিবারের লোকেরা থানায় এসে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চালায় অভিযোগ।

বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানান, বন্দি পালানোর ঘটনায় কর্তব্যের গাফিলতির কারণে এক জন ‘ডিউটি অফিসার’ ও দু’জন ‘সেন্ট্রি’কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। রাতের দিকে ‘ক্লোজ’ করা হয় ভাতারের ওসি আকাশ মুন্সিকে।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ন’পাড়া থেকে মুরাতিপুরে কবাডি খেলা দেখতে এসে খুন হন জাহাঙ্গির শেখ (২২) ও রাজেশ শেখ (২৬) নামে দুই যুবক। মোটরবাইক আটকে রাস্তাতেই একাধিক গুলি করা হয় তাঁদের। ঘটনাস্থলেই তাঁরা মারা যান। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে জিয়ারের নাম উঠে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, জিয়ারের নামে কাটোয়া, মঙ্গলকোট ও ভাতার থানাতেও একাধিক খুনের অভিযোগ রয়েছে। মে মাসের ২৫ তারিখে অণ্ডাল থানার পুলিশ অস্ত্র-সহ জিয়ারকে গ্রেফতার করে। ৩০ মে তাঁকে ভাতার থানায় আনা হয়। সোমবার তাঁকে বর্ধমান জেলা আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে বিচারক ফের দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ভাতার থানায় আসা ইস্তক পুলিশ হেফাজতের একটি লক-আপে একাই ছিলেন জিয়ার।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর ৪টে নাগাদ রুটিন নজরদারিতে বেরিয়ে তারা টের পায়, শৌচালয়ের ঘুলঘুলির ইট ভাঙা।
ফুট তিনেকের ফাঁক গলে চম্পট দিয়েছে জিয়ার। খোঁজাখুঁজি করে লাভ হয়নি।

শৌচালয়ের জানলা গলে দুষ্কৃতী পালানোর ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে তমলুক জেলা হাসপাতাল এমনকী কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের কার্জন ওয়ার্ডের শৌচালয় থেকেও চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ভাতার থানায় এ দিন সকালে গিয়ে দেখা গেল, লক-আপের সামনেই ডিউটি অফিসারের ঘর। সেখানেই থাকার কথা ‘সেন্ট্রি’র। শৌচাগারের ঘুলঘুলির গ্রিলে তার পেঁচানো। জং ধরে তা বেহাল। তার বেশ খানিকটা ভাঙা হয়েছে। খসানো হয়েছে আশপাশের কয়েকটি ইটও।

ইটের দেওয়াল ও লোহার গ্রিল ভাঙার আওয়াজ কানে এল না কেন? থানার পুলিশকর্মীদের বক্তব্য, “গরমকালে ডিউটি অফিসারের কাছেই স্ট্যান্ড ফ্যান চলে। সেই ফ্যান চললে বা শৌচালয়ের কল খোলা থাকলে অন্য কোনও শব্দ
কানে আসা কঠিন।’’ বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তার আবার মনে হয়েছে, “সপ্তাহখানেক পুলিশ হেফাজতে থেকে লক-আপের পরিস্থিতি হয়তো আঁচ করে নিয়েছিল ওই দুষ্কৃতী। হতে পারে সে প্রতিদিন একটু একটু করে ইট সরিয়েছে। শেষমেষ সুযোগ বুঝে পালিয়েছে।”

জিয়ারের পালানোর খবরে ক্ষোভ তৈরি হয়। সকাল ১০টা নাগাদ মঙ্গলকোটের ন’পাড়া থেকে ৪০-৫০ জন পুরুষ ও মহিলা ভাতার থানায় জড়ো হন। ‘‘দাগী দুষ্কৃতী কী করে পালাল!’’— এই প্রশ্ন তুলে শুরু হয় বিক্ষোভ। কয়েকজন ওসি-র ঘরের সামনে পৌঁছে যান। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ওসি-র আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে এক বয়স্ক মহিলা পুলিশের দিকে জুতো হাতে তেড়ে যান। তার পরেই পুলিশ লাঠি চালায়। পুলিশের পাল্টা দাবি, বিক্ষোভের নামে থানার ভিতর ঢুকে তাণ্ডব চালান নিহতদের পরিজনেরা। পুলিশকর্মীদের মারধরও করা হয়।

এই ঘটনায় পুলিশ ১০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। যদিও নিহত রাজেশের স্ত্রী আমিনা বিবি ও জাহাঙ্গিরের মা সালেমা বিবি বলেন, “পুলিশের গাফিলতিতে আসামী পালাল। আর পুলিশ আমাদের লাঠিপেটা করল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police station escaped
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE