নিজস্ব চিত্র
একটা পা বাদ যাওয়ার পর থেকেই ঘরে বসা। কাজ নেই। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। এই অবস্থায় যেন হঠাৎই খুলে গেল ভাগ্যের চাবিকাঠি! গলসির শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ জিয়ারের হতদরিদ্র পরিবারের ত্রাতা হয়ে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন ওই গ্রামেরই যুবক আজিজুর রহমান ও তাঁর দিদি রিয়ারুবি। অল্প সামর্থ্যের মধ্যে জিয়ারকে একটি তিন চাকার সাইকেল ভ্যান উপহার দিলেন ভাই-বোন। ওই ভ্যানে করেই এ বার দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে মাছ, শাক-সব্জি বেচবেন জিয়ার। সংসারে অভাব–অনটনও দূর হবে, এই আশায় বুক বাঁধছেন জিয়ারের স্ত্রী হাবিবা বেগমও।
আগে দিনমজুরের কাজ করতেন জিয়ার। যা রোজগার হত, তাতে সংসার এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচও চালাতে পারতেন জিয়ার। কিন্তু কয়েক বছর আগে একদিন কাজ থেকে ফেরার সময়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর পানাগড়ের দার্জিলিং মোড়ে একটি পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন তিনি। হাঁটু থেকে বাদ যায় ডান পা। তার পর থেকেই কাজ নেই। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় রোজগার। গ্রামের লোকেরা যে যতটা পারতেন সাহায্য করতেন। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন? ঠিক এই পরিস্থিতিতেই জিয়ারের পরিবারের এই দুর্দশার কথা গ্রামেরই বাসিন্দা শেখ আবুবক্করের কাছ থেকে জানতে পেরেই এগিয়ে এলেন আজিজুর ও তাঁর দিদি। এ ছাড়াও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গলসি ২ নম্বর ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সঞ্জীব সেনও। জিয়ার যাতে মাছের ব্যবসাও করতে পারেন, তার জন্য কিছু মাছ কিনে দিয়েছেন বিডিও। ফিতে কেটে বৃহস্পতিবার সকালে ওই সাইকেল ভ্যানের সূচনা করেন তিনিই। তাঁর কথায়, ‘‘একজন প্রতিবন্ধীর জীবন গড়ে দিতে এই উদ্যোগের কোনও তুলনা হয় না। জিয়ারের কাছ থেকে সবজি ও মাছ কেনার গ্রামবাসীদের অনুরোধ করেছি।’’
নিজের আর আশেপাশে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে শাক-সব্জি আর মাছ বেচবেন জিয়ার। সাইকেলটির নাম দেওয়া হয় ‘দুয়ারে সব্জি ও মাছের দোকান’। ঠিক করেছেন, জিনিসপত্রের দামও কম রাখবেন। আর কম দামে ঘরে ঘরে গিয়ে শাক-সব্জি বেচতে পারলে সবারই সুবিধে হবে, বলছেন জিয়ার। স্বামীর উপার্জনের পথ খুলে যাওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন জিয়ারের স্ত্রী হাবিবাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy