Advertisement
E-Paper

ভরসা সেই লজঝড়ে অ্যাম্বুল্যান্স

তাঁর অভিযোগ, রোগী স্বাচ্ছন্দ্যের বিন্দুমাত্র ব্যবস্থা ছিল না ওই অ্যাম্বুল্যান্সে। মাত্র আট কিলোমিটার পথ পেরোতেই তাঁর স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৭
বেহাল: শহরের পথে চলছে এমনই অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: শৈলেন সরকার

বেহাল: শহরের পথে চলছে এমনই অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: শৈলেন সরকার

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাড়ার একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেছিলেন জামুড়িয়ার বাসিন্দা বিপদবরণ মণ্ডল। কিন্তু, তা যে নামেই অ্যাম্বুল্যান্স, আসলে ছ্যাকরা গাড়ির চেয়েও খারাপ, তা প্রথমে বুঝতে পারেননি। হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে অবশ্য বিলক্ষণ তা টের পেয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, রোগী স্বাচ্ছন্দ্যের বিন্দুমাত্র ব্যবস্থা ছিল না ওই অ্যাম্বুল্যান্সে। মাত্র আট কিলোমিটার পথ পেরোতেই তাঁর স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

এই অভিজ্ঞতা শুধু তাঁর একারই নয়। আসানসোল শহরের পথে চলা বেশির ভাগ অ্যাম্বুল্যন্স নিয়ে প্রায়ই এই অভিযোগ কানে আসছে। সে সরকারি মাতৃযানই হোক, বা বেসরকারি ভাড়ার অ্যাম্বুল্যান্স। ভুক্তভোগীদের দাবি, একমাত্র নিরুপায় হয়েই অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে হয় কোনও পরিবারকে। এর জন্য বেশ চড়া ভাড়াই গুনতে হয় তাঁদের। কিন্তু, তার পরেও উপযুক্ত রোগী স্বাচ্ছন্দ্য মিলছে না।

অ্যাম্বুল্যান্সে কী ধরেনর রোগী-স্বাচ্ছন্দ্য থাকার কথা?

স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, রোগীর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার পৃথক ক্যাবিনেট থাকার কথা অ্যাম্বুল্যান্সে। এ ছাড়া, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, ফার্স্ট-এড বক্স, রোগীর স্ট্রেচার ও অ্যাটেন্ডেন্ট বসার পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। গাড়ির তলদেশ থেকে থেকে স্ট্রেচারের উচ্চতা ১১০ সেমি এবং সেটি নামানো ও তোলার জন্য ১৬ ডিগ্রি ঢালুর ব্যবস্থা থাকবে। রাস্তায় চলার সময় কোনও ভাবে অ্যাম্বুল্যান্সের জানলা বা দরজার কাচ ভেদ করে বাইরের ধুলো ঢোকা চলবে না।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলছে। তাঁরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লজ্‌ঝড়ে চার চাকাকে অ্যাম্বুল্যান্স বানানো হয়েছে। ভিতরের জায়গা এতটাই সঙ্কীর্ণ যে, রোগী ঠিকমতো হাত পা মেলে শুতে পারেন না। নড়বড়ে স্ট্রেচারের ঝাঁকুনিতে রোগীর প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। কার্যত রোগীর ঘাড়েই গাদাগাদি করে বসতে হয় পরিজনদের। রোগীর শয্যার তলায় উপুড় করে শোয়ানো রয়েছে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। কিন্তু, সেটির অবস্থা কী, তা বোঝার উপায় নেই। অভিযোগ, নেই ফার্স্ট-এড বক্স অ্যাটেন্ডেন্ট বা অক্সিজেন মাস্ক পরানোর টেকনিশিয়ান। জেলা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে থাকা এমনই একটি অ্যাম্বুল্যান্সের চালক পরিমল জানা বলে দিলেন, ‘‘দরকার হলে আমরাই রোগীকে অক্সিজেনের মাস্ক পরিয়ে দিই।’’

শহর ঘুরেও দেখা গেল, রাস্তায় রমরম করে চলছে এই রকম বহু খামতির অ্যাম্বুলেন্স। ভুক্তভোগীরা এমনও অভিযোগ তুলেছেন, প্রশাসন অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য নির্দিষ্ট ভাড়া বেঁধে না দেওয়ায় চালকেরা যেমন ইচ্ছে ভাড়া চেয়ে বসেন। অপারগ রোগীর পরিজনেরা তা দিতে বাধ্যও হন। ঘটনা হল, রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স নামানোর আগে পরিবহণ দফতরের অনুমোদন নেওয়ার সময় রোগী-স্বাচ্ছ্যন্দের ব্যবস্থাগুলি পরিবহণ কর্তাদের দেখে নেওয়ার কথা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পরিবহণ আধিকারিকেরা কী ভাবে এত খামতির অ্যাম্বুলেন্সগুলি রাস্তায় নামার অনুমতি দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আসানসোলের পরিবহণ আধিকারিক মৃণ্ময় মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা সব কিছু দেখেই অনুমোদন দিই। কিন্তু, রাস্তায় গাড়ি নামানোর পরে নিয়ম লঙ্ঘিত হলে আমাদের আর কিছু করার থাকে না।’’ পরিবহণ দফতরেরই এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, দফতরে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। রাস্তায় নিয়মিত গাড়ি পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত ইন্সপেক্টর নেই। স্বভাবতই এক শ্রেণির অসাধু অ্যাম্বুল্যান্স চালক সেই সুযোগে বেনিয়ম করছেন।

নিয়ম যে লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা মানছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তাও। তাঁর বক্তব্য, জেলার একাধিক সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের বেহাল অ্যাম্বুল্যান্সকে মাতৃযান হিসেবে চালানোর ঠিকা দেওয়া হয়েছে। যদিও আসানসোল জেলা হাসপাতালের মাতৃযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী সুপার কঙ্কন রায় বলছেন, ‘‘আমাদের ঠিকা দেওয়া ৩৬ টি মাতৃযানেই উপযুক্ত রোগী স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা আছে। আমরা নিয়মিত সেগুলির মান যাচাই করি।’’ তাঁর আরও দাবি, অ্যাম্বুল্যান্স সংক্রান্ত নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাঁরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থাও নেন। একই দাবি করেছেন আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দিব্যেন্দু ভগত। তিনি বলেন, ‘‘দফতরের অ্যাম্বুল্যান্সগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করি।’’

Health Ambulance Hospital অ্যাম্বুল্যান্স Asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy