মাধ্যমিকের প্রথম দুই দিনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী প্রায় চার গুণ। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এই পরিসংখ্যান নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। কেন বেশি সংখ্যক ছাত্রী মাধ্যমিক দিতে এল না, নানা ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে নানা তরফে।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১৭,৩৬৫ জন ছাত্রী ও ১৩,৬৩৩ জন ছাত্রের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। সোমবার ১০০ জন ছাত্র এবং ৩৭৯ জন ছাত্রী অনুপস্থিত থাকে। মঙ্গলবার ছাত্রের অনুপস্থিতির সংখ্যা এক থাকলেও, ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৯২।
কেন এই পরিস্থিতি? অন্ডাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিখা ঘোষ ভট্টাচার্যের মতে, আর্থিক অসাম্য দিন দিন বাড়ছে। তার প্রভাব শিক্ষাক্ষেত্রে পড়ছে। যে সব পরিবারে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়ারা পড়াশোনা করতে আসছে, তাদের ক্ষেত্রেই অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি বলে তাঁর ধারণা। এই সব পরিবারের পড়ুয়ারা দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েও, মাধ্যমিক দিতে যাচ্ছে না। মেয়েদের অনেকের ক্ষেত্রে এই বয়সে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে বলে দাবি।
হিরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য জানান, সরকারি স্কুলগুলিতে বেশির ভাগ দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি দেখে অনেকেই আর পড়াশোনায় না থেকে অন্য কাজে ঝুঁকছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তিনি জানান, তাঁদের স্কুলের তিন ছাত্রী অ্যাডমিট কার্ড নিতেও আসেনি। জানা গিয়েছে, তাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অমিতদ্যুতি ঘোষের দাবি, অনেক পরিবারে এখনও লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। আর্থিক কারণে প্রয়োজনে প্রথমে মেয়েদের পড়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সচেতনতার প্রচার দরকার।
তবে জেলার মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক রাজীব মুখোপাধ্যায় জানান, মেয়েদের অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি থাকলেও, তাতে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কারণ, অনুপস্থিত ১০০ জন ছাত্রের মধ্যে ২৯ জন সিসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু ৩৯২ জন অনুপস্থিত ছাত্রীর মধ্যে ২৭২ জনই সিসি পরীক্ষার্থী। রাজীব বলেন, ‘‘অর্থাৎ, চলতি বছরের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিতির হার সামান্যই। তবে অবশ্যই এই প্রবণতা আটকাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) সুনীতি সাঁপুই জানান, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে এই প্রবণতার কারণ নিয়ে সমীক্ষা করা হবে। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)