Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Raju Jha

রাজু ‘জেন্টলম্যান’ হয়ে ওঠেন কোন মন্ত্রে! মাসে কামাই ৪০ কোটি! খুন কি সিন্ডিকেট দ্বন্দ্বেই?

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১০ মাস ধরে কয়লা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন রাজু ঝা। তাঁদের মাসিক আয় হত প্রায় ৪০ কোটি টাকা। সেই সিন্ডিকেটই কি প্রাণ কাড়ল রাজুর?

Raju Jha

রাজুর খুনের পিছনে সম্ভাব্য কারণগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তার মধ্যে সিন্ডিকেট কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৩৮
Share: Save:

একটা সময় অবৈধ কয়লা কারবার করতেন তিনি। বিভিন্ন মামলার জন্য জেলও খেটেছেন। সেখান থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ। কিন্তু ঠিক ‘সুবিধা’ করতে পারেননি রাজেশ ওরফে রাজু ঝা। সম্প্রতি আবার কয়লা কারবারেই জড়িয়েছিলেন। তবে এ বার ‘বৈধ’ ব্যবসা। ‘জেন্টলম্যান’ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রাজু। সিন্ডিকেট করে সেই কয়লা ব্যবসার কামাই হচ্ছিল ভালই। অল্প সময়ের ব্যবধানে ফুলেফেঁপে উঠেছিল কারবার। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই কারবারেও ঝামেলা শুরু হয়। সেখান থেকেই কি শক্তিগড়ের ল্যাংচা হাবের সামনে খুন হতে হল রাজুকে? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

রাজুর খুনের নেপথ্যে সম্ভাব্য একাধিক কারণ নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছে পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে সিন্ডিকেট-দ্বন্দ্ব। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজুর নেতৃত্বে যে নতুন কয়লার সিন্ডিকেট তৈরি হয়, সেই সিন্ডিকেটের জন্যও খুন হতে পারেন তিনি। বস্তুত, এই সিন্ডিকেট নিয়ে আগেই তদন্ত শুরু করেছিল সিআইডি। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১০ মাস যাবত এই নতুন কয়লা সিন্ডিকেটে রাজু ছাড়া রয়েছেন জনৈক সুশীল, সৌরভ, জয়দেব, পাপ্পু, ওমর, ছটু, মাইজুল, লোকেশ প্রমুখ। এ-ও জানা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ জন কাজ করেন এই সিন্ডিকেটে।

কী ভাবে কাজ করে এই কয়লা সিন্ডিকেট? কলিয়াড়ি কর্তৃপক্ষ কয়লার নিলাম করে। যে ‘ডিও’ পান অর্থাৎ, যে কয়লা নিয়ে যাবেন তাঁর কাছ থেকে লরিপিছু প্রায় ৮ হাজার টাকা ‘লোডিং’ এর নামে এবং কয়লার টনপিছু ৬৫০ থেকে ২,৭০০ টাকা আদায় হয়। প্রতি দিন প্রায় ১ থেকে ১.৫০ কোটি টাকা আদায় করে এই সিন্ডিকেট। পুলিশ সূত্রে খবর, মাসে কম করে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা আয় করত এই সিন্ডিকেট। তার পর ‘উপরি’ আয় তো আছেই।

এই ব্যবসায় জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা বলছেন, ‘‘এই সব সিন্ডিকেটের এতটাই দাপট যে, অনেক খনিতে কয়লা নিলাম করতে দেওয়া হত না। শিল্পের প্রয়োজনে কয়লা প্রয়োজন হলে এঁদের সঙ্গে কথা বললেই কয়লা পাওয়া যায়।’’ তবে সেই কয়লার গুণগত মান অনেক সময় খারাপ হয় বলে বিভিন্ন কারখানার মালিক অভিযোগ করেন।

এর মধ্যে মাস খানেক আগে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের কাছে রাজুর অফিসে তাঁর সহযোগী জনৈক লোকেশ সিংহকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। অল্পের জন্য রক্ষা পান লোকেশ। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে রাজুর সিটি সেন্টারে যে বিলাসবহুল হোটেল আছে, সেখানে প্রায়শই বৈঠক হত ওই কয়লা সিন্ডিকেটের। কয়লা আসত মূলত পাণ্ডবেশ্বর, উখড়া, সোনপুর বাজার, ঝাঝরা, জামুড়িয়া ইত্যাদি এলাকা থেকে। এই কারবার তথা সিন্ডিকেটের অন্যতম মাথা ছিলেন রাজু।

স্থানীয় সূত্রে খবর, আগে অবৈধ কয়লা কারবারিদেরও প্রধান ছিলেন এই রাজু। সেটা বাম আমল। পরে রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বেশ কয়েক বছর আর কোনও কাজ পাননি রাজু। তার মধ্যে বিভিন্ন মামলায় বেশ কয়েক বার জেলেও যেতে হয়েছে তাঁকে। এর পর ২০২০ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন রাজু। ভেবেছিলেন বিধানসভা ভোটে টিকিট পাবেন। রাজু-ঘনিষ্ঠ আর এক কয়লা কারবারি জয়দেব খাঁ-ও বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে ভাগ্যপরীক্ষা করতে এসে দু’জনেই ‘বিফল’ হন। ভোটে টিকিট না পাওয়ার পর দু’জনকেই আর রাজনৈতিক দলের আশপাশে দেখা যায়নি।

কিছু দিন চুপচাপ থেকে গা-ঝাড়া দিয়ে আবার ব্যবসাতে মন দেন রাজু। সঙ্গী হন জয়দেব। দু’জন মিলে ‘বৈধ’ কয়লা কারবারে যুক্ত হন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় ১০ মাস ধরে এই নতুন সিন্ডিকেট কাজ করছে। ঠিক ১০ মাসের মাথায় খুন হলেন রাজু। বস্তুত, কয়লা অঞ্চলে এই প্রথম কোনও ‘কয়লা মাফিয়া’ খুন হলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raju Jha Coal Mine Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE