Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Raju Jha Murder Case

দুর্গাপুর থেকে কাটোয়া পর্যন্ত গতিবিধিই সূত্র

পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুর থেকে ধরা হয় অভিজিৎকে। তিনি একটি নির্মাণ সংস্থার কর্মী। আদি বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির থুমকোঁড় গ্রামে।

flat of Raju Jha murder accused Abhijit Mondal\'s flat

অভিজিৎ মণ্ডলের আবাসন। দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
পূর্ব বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৩৩
Share: Save:

বহুতল আবাসনের প্রথম তলায় বছর ছয়েক আগে স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তিনি। পরিবার নিয়ে থাকতেন বামুনাড়ার ওই আবাসনেই। পড়শিদের একাংশের দাবি, এলাকায় বিশেষ মেলামেশা না করলেও, তাঁর আচার-আচরণে খারাপ কিছু নজরে পড়েনি। রাজু ঝা খুনের ঘটনায় সেই অভিজিৎ মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ায় খানিকটা অবাক ওই পড়শিরা।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুর থেকে ধরা হয় অভিজিৎকে। তিনি একটি নির্মাণ সংস্থার কর্মী। আদি বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির থুমকোঁড় গ্রামে। বেশ কয়েক বছর আগেই তিনি দুর্গাপুরে চলে আসেন। তখন থেকে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত কম ছিল। তবে স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, কয়েক দিন আগে অভিজিৎকে গ্রামে দেখা গিয়েছিল। এ দিন অবশ্য ওই গ্রামে অভিজিতের বাড়িতে কেউ ছিলেন না। বামুনাড়ার আবাসনে গিয়েও দেখা গিয়েছে, ফ্ল্যাট তালাবন্ধ।

রানিগঞ্জ-দুর্গাপুরে নানা সূত্রের দাবি, কয়লা কারবারি বলে পরিচিত এক ব্যক্তির গাড়ি চালাতেন অভিজিৎ। ওই ব্যক্তির বকলমে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে অম্বুজা টাউনশিপে একটি জিম ও কার্যালয় রয়েছে বলেও খবর। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, সেখান থেকে দু’জনকে বর্ধমানে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খনি এলাকায় নানা মহলের দাবি, কয়লা কারবারি ওই ব্যক্তি রাজুর বাল্যবন্ধু। এক সময়ে দু’জনে একই সঙ্গে কারবার করতেন। দু’জন বিলাসবহুল বাসের ব্যবসাও শুরু করেন। ২০১৩ সালে সে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে ওই ব্যক্তির সঙ্গে রাজুর বাণিজ্যিক সম্পর্ক তেমন ছিল না বলেই দাবি।

এই পরিস্থিতিতে, রাজু খুনে অভিজিতের যোগসূত্রে কী ভাবে মিলল? তদন্তকারীদের দাবি, ১ এপ্রিল আততায়ীরা যে নীল গাড়িতে এসেছিল, সেটি শক্তিগড় থানার সামনে ছেড়ে দেয়। তার পরে তারা একটি সাদা এসইউভি-তে উঠে পালিয়ে যায়। কিন্তু শক্তিগড় রেলগেট পার করে কিছুটা যাওয়ার পরে দু’টি সাদা এসইউভি দেখা যায় সিসিটিভি ফুটেজে। একটি গাড়ি বর্ধমান-কাটোয়া রোডে ওঠে। আর একটি মেমারি-কাটোয়া রোডে উঠতে দেখা যায়। সূত্র পেতে পুলিশ ঝাড়খণ্ড সীমানা থেকে দুর্গাপুর হয়ে শক্তিগড় পর্যন্ত মোবাইল ফোনের ‘টাওয়ার ডাম্প অ্যানালিসিস’ করে। কয়েকটি নম্বর সন্দেহের তালিকায় যুক্ত হয়। এর পরে সাদা গাড়িটি পালানোর রাস্তায় ফোনের একই রকম তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ভাবে মোট ৩৮টি ‘টাওয়ার ডাম্প অ্যানালিসিস’ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সাতগেছিয়া-কাটোয়া রাস্তা ধরে যাওয়া সাদা গাড়িতে একটি নম্বর সিগন্যাল দেখাচ্ছিল। সেটি কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে অজয় পেরিয়ে বীরভূম-মুর্শিদাবাদ দিয়ে ঝাড়খণ্ডে ঢুকছে।

পুলিশ সূত্রের দাবি, এই পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক নম্বর মেলে। ঘটনার দিন রাজু সিটি সেন্টারের হোটেল থেকে রওনা দেওয়ার সময়ে একটি নম্বরের ‘টাওয়ার লোকেশন’ সেখানে মিলেছিল। সেই নম্বর ‘লোকেশন’ সে দিন পরে কাটোয়ার কাছেও পাওয়া যায়। সে নম্বরটির বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তার ভিত্তিতেই ঘটনায় অভিজিতের যোগ মিলেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। তবে অভিজিতের ফোন এখনও উদ্ধার হয়নি। পুলিশের অনুমান, ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে ভাড়াটে খুনির সঙ্গে যোগাযোগ করা থেকে ঘটনার পরে আততায়ীদের পালানোর সময়ে পথ চিনিয়ে দেওয়া, সবেই ছিলেন অভিজিৎ।

ধৃতের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন দাবি করেন, “নিরপরাধ এক যুবককে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raju Jha Murder Case coal mafia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE