এত দিন যে হাসপাতাল ছিল ‘প্রি-কোভিড’, বর্ধমানের গাঙপুরে আজ, বুধবার থেকে সেটি ‘কোভিড’ হাসপাতালে রূপান্তর করা হচ্ছে। মঙ্গলবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে তা জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে করোনার মৃদু সংক্রমণ এবং উপসর্গহীন রোগীদের জন্য ‘সেফ হোম’ তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জেলার চার জায়গায় এই রকম ‘সেফ হোম’ তৈরি করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে, জেলায় আর ‘প্রি-কোভিড’ হাসপাতাল রাখা হবে না। তার বদলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ খুলে সেখানে ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (সারি) এবং ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস’ (ইলি) রোগীদের রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে সাধনপুরে নির্মীয়মাণ কৃষি ভবনে ‘সেফ হোম’ তৈরি করা হবে। এ ছাড়া, জেলায় আরও কয়েকটি জায়গায় তা করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনমতো এই সংখ্যা বাড়ানো হবে।’’ কালনার পরে, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালেও ‘প্রি-কোভিড’ হাসপাতাল হচ্ছে না বলে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে প্রি-কোভিড হাসপাতাল প্রয়োজন নেই।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় জানান, গাঙপুরে ১২০ শয্যার ‘কোভিড’ হাসপাতালে সিসিইউ, আইসিইউ, ডায়ালিসিস-সহ সব রকম চিকিৎসার সুবিধা থাকবে। কয়েক দিন আগেই এর অনুমোদন এসে গিয়েছিল। সিএমওএইচ আরও বলেন, ‘‘বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে ৫০ শয্যার ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ খোলা হবে। সেখানেই ‘সারি’ বা ‘ইলি’ রোগীদের চিকিৎসা করা হবে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানায়, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমানে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ১৪১। তাঁদের মধ্যে ১২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আক্রান্তেরা কাঁকসায় বেসরকারি ‘কোভিড’ হাসপাতালে ভর্তি। স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান, আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই উপসর্গহীন। তাঁদের ভর্তি করাতে বারবার আপত্তি জানিয়েছেন কাঁকসার ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, সরকার মৃদু সংক্রমণ বা উপসর্গহীন রোগীদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে।
এর মধ্যেই মৃদু সংক্রমণ বা উপসর্গহীন রোগীদের জন্য প্রতিটি ব্লকে ‘সেফ হোম’ তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। বিএমওএইচের তত্ত্বাবধানে সেগুলি চালাতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ‘সেফ হোম’-এর সঙ্গে স্থানীয় ব্লক হাসপাতাল ও ‘কোভিড’ হাসপাতালের যোগাযোগ থাকবে। মেডিক্যাল দল দিনে দু’বার কেন্দ্র পরিদর্শন করে রোগীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করবেন। কোনও রোগীর অবস্থার অবনতি হলে বা অক্সিজেন নির্দিষ্ট মাত্রার নীচে নেমে গেলে, তাঁকে ‘কোভিড’ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। আরও জানানো হয়েছে, রোগীর বাড়ি থেকে খাবার এলে তা সরবরাহ করা হবে। অন্যথায় প্রশাসন ব্যবস্থা করবে। লালারসের নমুনা সংগ্রহের ১৪ দিন পর্যন্ত উপসর্গ দেখা না গেলে ‘সেফ হোম’ থেকে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য) রজত নন্দ বলেন, ‘‘কৃষি ভবনে দেড়শো শয্যার ‘সেফ হোম’ খোলা হচ্ছে। ব্লকগুলিকেও ‘সেফ হোম’ খোলার জন্য বিধিবদ্ধ জায়গা খুঁজতে বলা হয়েছে।’’