E-Paper

হিমশিম পরীক্ষার চাপ সামলাতে, দাবি নানা স্কুলের

গত রবিবার এসএসসি-র নবম-দশম শ্রেণির জন্যে ৩০টি কেন্দ্রে ১৫,২৪৩ জন পরীক্ষার্থী ছিল। তার মধ্যে ৯৫.৪৪% পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বহু স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা কম। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও শিক্ষাকর্মীরও যথেষ্ট অভাব। কোথাও আগে থেকেই শূন্যপদ রয়েছে। কোথাও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ চাকরি হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ মাধ্যমিকের সিমেস্টার ও তার সঙ্গে কোনও কোনও স্কুলে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। তারই মধ্যে, রবিবার পূর্ব বর্ধমানের ২৩টি স্কুলে এসএসসির একাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হবে। তাই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বা শিক্ষাকর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। শনিবার দুপুরে পরীক্ষার ব্যবস্থার জন্য শিক্ষকদের চেয়ার-বেঞ্চও বইতে হয়েছে নানা কেন্দ্রে। এ সবের মধ্যে, প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য গাড়ি ভাড়া কেন্দ্রগুলিকে দিতে হবে, এই সিদ্ধান্তে অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

গত রবিবার এসএসসি-র নবম-দশম শ্রেণির জন্যে ৩০টি কেন্দ্রে ১৫,২৪৩ জন পরীক্ষার্থী ছিল। তার মধ্যে ৯৫.৪৪% পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেন। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য বর্ধমান শহরে তিনটি কলেজ, কাটোয়া ও কালনা কলেজ ছাড়াও, ১৮টি স্কুলে এসএসসি-র পরীক্ষা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রই জেলা ও মহকুমা শহরে। জেলায় পরীক্ষার্থী রয়েছেন ১২,৬৩৬ জন। শনিবার জেলা স্তরে পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধানদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। গত রবিবার বর্ধমানের দু’টি স্কুলে টোকাটুকি ও দৃষ্টিহীনদের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সে নিয়ে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শহরের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের প্রধানেরা জানান, এসএসসি পরীক্ষা চালানোর জন্য খুব কম টাকা পাওয়া যায়। তা নজরদার, স্কুলের কর্মীদের প্রাপ্য ও দৈনন্দিন খরচেই চলে যায়। তার উপরে, প্রশ্নের গাড়ির ভাড়া দেওয়া কী ভাবে সম্ভব? একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্কুলের তহবিল থেকে ওই টাকা দিতে হবে। কিন্তু আমাদের গাড়ি ভাড়া করার উপায় থাকছে না। তা জেলা থেকে করছে।”

বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলে ৪৮০ জন পরীক্ষার্থী। ওই স্কুলের সব ঘর তো বটেই, প্রাথমিক স্কুলের ঘরেও পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুণাভ চক্রবর্তীর কথায়, “কার্যত এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন। সব ঘরে পরীক্ষা চলছে। এক জনের পক্ষে কী করে সামলানো সম্ভব? উচ্চ মাধ্যমিক এবং এসএসি পরীক্ষা পর পর। তিন বার আসন-বিন্যাস করতে হচ্ছে। ফলে, চাপ তৈরি হচ্ছে।” বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাই স্কুলেও ৪৮০ জন পরীক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিকের দাবি, “শিক্ষিকারা-সহ সবাই সহযোগিতা করায়, টানাপড়েনের মধ্যেও উতরে যাচ্ছি।” শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দাবি, “শনি-রবি ও সোমবার পরীক্ষা থাকায় দৈনিক মজুরি দিয়ে এক জনকে নিয়োগ করতে হয়েছে।’’

বেশ কয়েকটি কেন্দ্র নজরদারি বা গার্ড দেওয়ার জন্য অন্য স্কুল থেকে শিক্ষক আনা হয়েছে। বর্ধমান শহরের ওই সব স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, “এত কম সংখ্যক শিক্ষক নিয়ে কী ভাবে পরীক্ষায় নজরদারি হবে। তাই জেলা শিক্ষা ভবনের মাধ্যমে অন্য স্কুল থেকে শিক্ষক নিতে হয়েছে।” বর্ধমানের বড়বাজারের সিএমএস হাই স্কুল উচ্চ মাধ্যমিকের প্রধান কেন্দ্র। আবার, এসএসসিতে ৬২৪ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন সেখানে। ওই স্কুলের দ্বিতীয়ার্ধে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও চলছে। প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায় বলেন, “আমরা বাধ্য হয়েছি অন্য স্কুল থেকে শিক্ষক নিতে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কম থাকায়, তাঁদের কাজও শিক্ষকদেরই করতে হচ্ছে। পরীক্ষার বন্দোবস্ত করতে চেয়ার-বেঞ্চ বয়ে আনা, রোল নম্বর সাঁটানো, সবই করতে হচ্ছে।”

প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠনের অন্যতম কর্তা সৌমেন কোনারের দাবি, “প্রায় প্রতিটি স্কুলই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে ধুঁকছে। যে সব স্কুলের ক্ষমতা আছে, তারা চুক্তিভিত্তিক বা দৈনন্দিন লোক নিয়োগ করছে। যাদের সে ক্ষমতানেই, সেখানে শিক্ষকদের ঘণ্টাও বাজাতে হচ্ছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy