Advertisement
E-Paper

হাতে-পায়ে ধরুন বিরোধীর: সিদ্দিকুল্লা

কোনও বিরোধ নয়, মন বড় করে চলতে হবে। দরকার হলে বিরোধীদের হাতে-পায়ে পড়তে হবে— ভোট বৈতরণী পার করতে এই টোটকাই দিলেন মঙ্গলকোটের তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:৪২
বৈঠকে পাশাপাশি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও অপূর্ব চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

বৈঠকে পাশাপাশি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও অপূর্ব চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

কোনও বিরোধ নয়, মন বড় করে চলতে হবে। দরকার হলে বিরোধীদের হাতে-পায়ে পড়তে হবে— ভোট বৈতরণী পার করতে এই টোটকাই দিলেন মঙ্গলকোটের তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।

মঙ্গলবার মঙ্গলকোট বাস স্টপেজের কাছে তৃণমূলের দলীয় দফতরে দলের নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার নির্দেশ বা পরামর্শ বলে ধরে নিতে পারেন। আমরা শাসকের আসনে বসে আছি। মন বড় করতে না পারলে আমাদেরই ক্ষতি হবে।” তৃণমূলের একাংশের যদিও মত, সিদ্দিকুল্লা মুখে বিরোধীদের ভোট টানার জন্য ওই কথা বললেও আসলে তাঁর লক্ষ্য ছিলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতারা। তাঁদের মানিয়ে নিয়ে এক সঙ্গে বেঁধে ফেলতেই তিনি এমনটা বলেছেন বলেও তাঁদের দাবি।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোট বিধানসভা আসনে এ বারও জোরালো দাবিদার ছিলেন গত বারের প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরী (দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে অচলদা নামেই পরিচিত তিনি)। গত বার মাত্র ১২৬ ভোটে সিপিএমের শাহজাহান চৌধুরীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। এ বারেও প্রার্থী ঘোষণার আগে দলের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল বেশ কয়েকটি দলীয় সভায় অপূর্ববাবুকে প্রকাশ্যে মঙ্গলকোটের প্রার্থী বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু তালিকা প্রকাশ পেলে দেখা যায়, কাটোয়ার করজগ্রামে বাসিন্দা তথা রাজ্যের অন্যতম পরিচিত মুখ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে প্রার্থী করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই অপূর্ববাবুর অনুগামীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভও জানান অনেকে। অন্য দিকে, অপূর্ববাবুর বিরোধী গোষ্ঠী বলে এলাকায় পরিচিত জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী ও তাঁর অনুগামীদের অনেকেই এই খবরে উৎফুল্ল হন। দু’পক্ষকে শান্ত করতে সোমবার সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী পৃথক ভাবে দু’পক্ষেরই সঙ্গে কথাও বলে গিয়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে।

এ দিন বেলা তিনটে নাগাদ কৈচরে অপূর্ববাবুর সঙ্গে প্রায় ঘন্টা খানেক একান্তে বৈঠক করেন তৃণমূল প্রার্থী। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ‘রুষ্ট’ অপূর্ববাবুকে শান্ত করার জন্যই এই বৈঠক করেন সিদ্দিকুল্লা। অপূর্ববাবুকে সামনে রেখেই মঙ্গলকোটে লড়াই নামবেন তাঁরা বলেও আশ্বাস দেন সিদ্দিকুল্লা। এ ছাড়াও কোথায়, কী ভাবে ভোট পরিচালনা করা হবে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। এমনকী, কৈচরের এই দলীয় দফতর থেকে ভোট পরিচালনা করলে কোনও কোনও নেতা-কর্মীরা আসতে না পারেন ধরে নিয়ে ‘নিরপেক্ষ’ জায়গায় দলীয় নির্বাচনী কার্যালয় খোলারও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পরে অপূর্ববাবু-ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, “কে কোথায় দেওয়াল লিখছে, পতাকা তুলছে— এ সব দেখে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। তাঁরা করছে করুক না! তাঁরা তো তৃণমূলেরই দেওয়াল লিখছে বা পতাকা তুলছে।”

পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে দলের কর্মীদের উদ্দেশে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, “আপনাদের সম্মান দিয়েই আমি চলব। অপূর্ব চৌধুরীকে সামনে রেখেই আমরা নির্বাচনে লড়াই করব। বিকাশ চৌধুরীর সঙ্গেও আমার দু’বার কথা হয়েছে। আমাকে একটা কাজ করার সুযোগ দিন। কাজের পরিবেশ করে দিন।” দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ ও পরামর্শ নেওয়ার জন্য দুটি ফাইল রাখার কথাও বলেন তিনি। সঙ্গে জানান, নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি ও নীতি নির্ধারণ কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচনের আগে ন্যূনতম চারটে বৈঠক করবেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। বৃহস্পতিবার কৈচরে একটি বিয়েবাড়িতে পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করার কথা তাঁর। সিদ্দিকুল্লার কথায়, “বর্ধমান জেলায় কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তার খতিয়ান রাজ্য নেতৃত্ব আমাকে দিয়েছে। আমি এখানকার নেতৃত্বের কাছে মঙ্গলকোটে গত পাঁচ বছরে কী কী উন্নয়ন হয়েছে তার খতিয়ান চেয়েছি। সেই খতিয়ান ধরেই মানুষের কাছে যাব।” তারপরেই তিনি বলেন, “প্রয়োজন হলে সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রসের হাতে-পায়ে ধরব।” অপূর্ববাবুও বলেন, “আমরা দলের অনুগত সৈনিক। দল যে নির্দেশ দেবে, আমরা সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।”

তবে সব শুনে সিপিএমের মঙ্গলকোটের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর কটাক্ষ, “নিজের হাতে তৈরি দলকেই যিনি খুন করেছেন, তাঁর প্রতি মানুষ কী বিশ্বাস রাখবেন?” বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের নেত্রী শ্যামা মজুমদারেরও দাবি, “বিপদ বুঝে ভোটের পাওয়ার লোভে ওই সব কথা বলেছেন উনি।”

siddiqullah chowdhury assembly election 2016 vote campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy