পুলিশ প্রশাসনের স্বস্তি। নিজস্ব চিত্র
‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে মাস দু’য়েক আগে, এক পরিবারের সাত জনকে গ্রাম ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছিল। দু’বার তাঁদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন। শনিবার দিনভর মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল ও এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী দফায়-দফায় দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিকেলে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, “সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে শুনেছি।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত মাস দু’য়েক আগে দশহারা পুজোর সময়। ওই দিন ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা হয়েছিল এক ব্যক্তি, তাঁর বৃদ্ধা মা, দুই ছেলে, স্ত্রী, পুত্রবধূ ও নাতিকে। তাঁরাথাকছিলেন হুগলিতে।
শনিবার সকালে ওই পরিবারের কর্তা দাবি করেন, “ডাইন অপবাদ দিয়ে গ্রামের কিছু লোক আমাদের বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে। মারধর করেছে। বাড়িঘরও ভাঙচুর করেছে।’’ তাঁর ছোট ছেলে হুগলির একটি কলেজের ছাত্র। তাঁর দাবি, “কলেজে স্নাতকস্তরের পরীক্ষা চলছিল ওই সময়। পালিয়ে আসার সময় বই-খাতাও সঙ্গে নেওয়ার সুযোগ পাইনি। কী ভাবে পরীক্ষা দিয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না।’’
কঠিন সময়ে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল গ্রামেরই ১৩টি পরিবার। অভিযোগ, সে কারণে তাদের চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই পরিবারগুলির সদস্যদের অভিযোগ, “অন্যায় করেছেন গ্রামের কয়েক জন। তার প্রতিবাদ করায়, আমাদের চাষ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জলের অভাবে বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ গ্রামের এক বাসিন্দার দাবি, “সভ্য সমাজে ডাইন অপবাদ দেওয়া লজ্জার। অসৎ উদ্দেশ্যে অপবাদ দেওয়া হয়।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল থেকে পুলিশ গ্রাম ঘিরে রেখেছিল। প্রথমে প্রশাসনের আধিকারিকেরা গ্রামে গিয়ে মোড়লের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। ঘরছাড়াদের ফেরানো নিয়ে তিনি কয়েকটি শর্ত দেন। এসডিপিও ঘরছাড়াদের সে সব শর্তের কথা জানান। শর্তগুলি মেনে ঘরে ফেরেন তাঁরা। তার পরে, তাঁরা মোড়লের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ফের ‘অশান্তির’ পরিবেশ তৈরি হয়। ঘরে ফেরা লোকেদের একাংশ জিটি রোড অবরোধ করেন। পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। পুলিশ ফের বসায় দু’পক্ষকে। ঘরছাড়াদের বাড়িতে ঢোকার ‘অনুমতি’ দেন মোড়ল। মোড়ল বলেন, “কেউ ডাইন অপবাদ দেয়নি। সমাজের একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য ওদের ডাকা হয়েছিল। ওরা আলোচনায় আসেনি। আমরা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।’’ যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মোড়ল-ঘনিষ্ঠ সেই গ্রামবাসীর দাবি, “প্রচারে আসার জন্য ওই পরিবার মিথ্যা রটাচ্ছে। ওই দিন ওরা আলোচনায় এলে সবমিটে যেত।’’
আদিবাসী বিজ্ঞান মঞ্চের কর্ণধার সরকার হেমব্রম বলেন, “ডাইন বলে কিছু নেই, এটা সকলকে বুঝতে হবে। এ নিয়ে আমরা কাউন্সেলিং-ওকরে থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy