বন্ধ পড়ে এইচএফসিএল। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার দোভি-দুর্গাপুর প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন উদ্বোধন করেছেন। এর পরে পানাগড়ের বেসরকারি সার কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। পাশাপাশি, তাঁর দাবি, দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ‘হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড’-ও (এইচএফসিএল) খোলা যেতে পারে। এই দাবি নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
এ দিন সুরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘আমার সুপ্ত বাসনা, ফের দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চালু করতে হবে। আশা করি, যে ভাবে এই পাইপলাইন থেকে গ্যাস নিয়ে গোরক্ষপুর, বারাউনি সার কারখানা চালু হবে, সে ভাবেই দুর্গাপুরের সার কারখানাও চালু করা যেতে পারে।’’
১৯৬৫-তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী দুর্গাপুর সার কারখানার শিলান্যাস করেন। কাঁচামাল হিসেবে ন্যাপথা ব্যবহার করে ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয় ১৯৭৪-এ। কিন্তু উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় নয়ের দশকের গোড়া থেকে কারখানাটি রুগ্ণ হতে থাকে। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়। কারখানা ‘বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিআইএফআর)-এ চলে যায়।
সার কারখানা ফের খোলার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছে সিটু ও সিপিএম। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তদ্বির করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২০১১-য় অর্থনীতি বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি কারখানার পুনরুজ্জীবনে সায় দেয়। ২০১৩-র ১৪ মার্চ তৎকালীন সার প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত জেনা সংসদে জানান, কারখানা ফের খোলার জন্য বিআইএফআর-এর কাছে ‘ড্রাফট রিহ্যাবিলিটেশন স্কিমস’ (ডিআরএস) জমা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যসভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন সিপিএম সাংসদ তপন সেন। সার প্রতিমন্ত্রী নিহাল চাঁদ তখন আশ্বাস দেন, নিলাম করে বেসরকারি উদ্যোগে কারখানাটি চালু করা হবে। কিন্তু তার পরেও আর কিছু হয়নি। অথচ ওড়িশার তালচের, তেলঙ্গানার রামাগুন্ডম, বিহারের বারাউনি, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর, ঝাড়খণ্ডের সিন্ধ্রিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা ফের চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। দোভি-দুর্গাপুর পাইপলাইন থেকে গ্যাস নিয়েই গোরক্ষপুর ও বারাউনি সার কারখানায় উৎপাদন চালু হবে। সেখানে দুর্গাপুরের সার কারখানা নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের কাছে, অভিযোগ বাম ও তৃণমূল নেতৃত্বের।
এ দিন সাংসদের মন্তব্যের পরে বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক অবশ্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রের ইউপিএ-২ সরকার দুর্গাপুর সার কারখানা খোলার আশ্বাস দিলেও কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে সাড়াশব্দ করেনি।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে শেষ বার দুর্গাপুর সার কারখানা খোলার বিষয়ে উদ্যোগের কথা শোনা গিয়েছিল। বিজেপির সরকার ক্ষমতায় আসার পরে থেকে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বিক্রির কথাই শোনা গিয়েছে।’’ তৃণমূলের অন্যতম জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এএসপি-র বিলগ্নিকরণ বাতিল করতে দুর্গাপুরবাসী নিরন্তর লড়ছেন। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সাংসদের এ সব কথাকে তাঁরা আদৌ আমল দেবেন না।’’
তবে সুরেন্দ্রবাবুর দাবি, ‘‘দার্জিলিং, বিহার, ঝাড়খণ্ডের সাংসদ থাকাকালীনও আমি এই কারখানা চালুর দাবি তুলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy