Advertisement
E-Paper

ছাদ চুঁইয়ে জল, কেঁপে ওঠে ভবন

জরাজীর্ণ ভবন, দূষণের সমস্যা, পরিকাঠামোর নানা অভাব নিয়েই চলছে বহু স্কুল।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

ছাদের পলেস্তরা খসে বিপজ্জনক ভাবে বেরিয়ে রয়েছে লোহার শিক। কয়লার গুঁড়ো ঢুকে কালো হয়ে যাচ্ছে বই-খাতা থেকে মিড-ডে মিলের ভাতও। আগাছা সাফ না হওয়ায় সাপখোপের আতঙ্ক নিয়েই চলছে পড়াশোনা। বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে ঝরছে জল, ক্লাসঘরের মধ্যেই ছাতা মেলে ধরতে হচ্ছে।

এমন বিভিন্ন ছবি দেখা যায় নানা এলাকার প্রাথমিক স্কুলে। জরাজীর্ণ ভবন, দূষণের সমস্যা, পরিকাঠামোর নানা অভাব নিয়েই চলছে বহু স্কুল। বিকল্প উপায় না থাকায় সেখানেই ছেলেমেয়েদের পাঠান এলাকার মানুষজন। যতক্ষণ না স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে খুদেরা, চিন্তায় থাকেন অভিভাবকেরা। স্কুলের বেহাল দশার জন্য তাঁরা দোষারোপ করেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষগুলির দাবি, সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েও এখনও কাজ হয়নি।

হিরাপুর শিক্ষাচক্রের ঢাকেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীর্ণ ক্লাসঘরে বসেই পড়াশোনা করে খুদেরা। শিক্ষকেরা জানান, মাঝে-মধ্যেই ছাদের চাল ভেঙে পড়ে। দেওয়াল ও মেঝে ফেটে চৌচির। জানলার পাল্লা আধ ভাঙা। পড়ুয়ারা স্কুল শুরুর আগে শ্রেণিকক্ষের যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করে, যার অবস্থাও বেশ সঙ্গিন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের কথা ভেবে খুবই চিন্তায় থাকি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’

সালানপুরের পাহাড়গোড়ায় প্রাথমিক স্কুলে ভবন থেকে সামান্য দূরেই খোলামুখ খনি। কয়লা তুলতে খনিতে বিস্ফোরণ ঘটালেই স্কুল ভবন কেঁপে ওঠে বলে জানান এলাকাবাসী। ভবনটি দিন-দিন বসে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক নিখিলচন্দ্র মাজির কথায়, ‘‘প্রতিদিন তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে থাকি।’’ তিনি জানান, প্রায় চার বছর আগে বিশদ জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করলেও এখনও কিছু হয়নি।

বারাবনি শিক্ষা চক্রের অধীনে থাকা বারাবনি স্টেশনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে কয়লার গুঁড়োর পুরু আস্তরণ। টেবিল-বেঞ্চেও এক অবস্থা। কয়লার গুঁড়ো পড়ছে বই-খাতাতেও। শুধু তাই নয়, মিড-ডে মিল খেতে বসলে ভাতও কালো হয়ে যায়, জানায় পড়ুয়াদের অনেকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মহুয়া ঘোষ বলেন, ‘‘দূষণের জেরে মাঝে-মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে। চোখ জ্বালা করে পড়ুয়াদের। অনেক বার আবেদন করেছি সংশ্লিষ্ট দফতরে। তবে কাজ হয়নি।’’

কুলটি শিক্ষা চক্রের ডুবুরডিহি প্রাথমিক স্কুলে চারটি শ্রেণিতে মোট পড়ুয়া জনা পঞ্চাশ। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ বলতে প্রায় দু’শো বর্গফুটের একটি মাত্র ঘর। সেখানে বসেই ছাত্র পড়াচ্ছেন দু’জন শিক্ষক। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষকে অনেক বার জানিয়েও লাভ হয়নি। তাই আর কিছু বলি না।’’

কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে চিত্তরঞ্জন শিক্ষাচক্রের অধীনে থাকা রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্‌লসের পাঁচটি প্রাথমিক স্কুল পড়েছে অথৈ জলে। শ্রমিক-কর্মীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য এই স্কুলগুলি তৈরি করেছিলেন কেব্‌লস কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন রাজ্য সরকার দেয়। কিন্তু বছর তিনেক আগে কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পর থেকে ভবনগুলির আর দেখভাল হয় না। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। তখন ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক, সবাইকেই মাথায় ছাতা ধরতে হয়।’’

School Students Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy