Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টিফিনের টাকায় সাহায্য ক্যানসার আক্রান্ত সহপাঠীকে

তন্ময়ের এমন অসুস্থতায় চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা তাপস বিশ্বাস। তিনি জানান, সম্বল বলতে বিঘা পাঁচেক জমি। ছেলের চিকিৎসার জন্য অল্প-অল্প করে জমি বিক্রি করতে হচ্ছে।

কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে সাহায্য সংগ্রহ। নিজস্ব চিত্র

কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে সাহায্য সংগ্রহ। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৪
Share: Save:

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন বছর চোদ্দোর ছাত্র। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, তাই ছেলের চিকিৎসার জন্য চাষের জমি বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে সহপাঠীর চিকিৎসায় সাহায্য করতে এগিয়ে এল কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্র।

মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে বোয়ালডাঙা গ্রামের তন্ময় বিশ্বাস। পরিবারের লোকজন জানান, সম্প্রতি আচমকা দু’দিন জ্বরে ভোগার পরে চোখমুখ ফুলে যায় তন্ময়ের। এলাকার এক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করিয়েও ফল হয়নি। ৯ জানুয়ারি তাকে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই জানা যায়, ব্লাড ক্যানসার হয়েছে তার। ১৯ জানুয়ারি ঠাকুরপুকুরে ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তন্ময়কে।

তন্ময়ের এমন অসুস্থতায় চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা তাপস বিশ্বাস। তিনি জানান, সম্বল বলতে বিঘা পাঁচেক জমি। ছেলের চিকিৎসার জন্য অল্প-অল্প করে জমি বিক্রি করতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সেই টাকাতেই ছেলের চিকিৎসা হচ্ছে। ইতিমধ্যে লাখখানেক টাকা খরচও হয়ে গিয়েছে।’’ পরিবারটির এমন বিপাকে পড়ার খবর জেনে উদ্যোগী হন বোয়ালডাঙা গ্রামের বাসিন্দা, সেনাবাহিনীর প্রাক্তন মেজর নরেশচন্দ্র দাস। তিনিই তাপসবাবুকে নিয়ে যান স্কুলে।

পঞ্চম শ্রেণি থেরে মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়েই পড়ছে তন্ময়। তার এমন অসুস্থতার কথা জানতে পেরে নড়েচড়ে বসেন স্কুলের সকলেই। পকেট থেকে টিফিনের টাকা বের করে দেয় সহপাঠীরা। এগিয়ে আসেন শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী-সহ সকলেই। শুক্রবার তাপসবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয় হাজার পনেরো টাকা। শনিবারও অর্থ সংগ্রহের কাজ চলেছে স্কুলে।

তন্ময়ের সহপাঠী দেবকুমার রায় বলে, ‘‘ক্লাসে তন্ময় সকলের প্রিয়। সবাই প্রার্থনা করছি যাতে ও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’’ ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র জিৎ পাল, মৃন্ময় সাহা, তুফান টুডু, সুরজিৎ দাসেরা জানায়, আগামী কয়েক দিনও টিফিনের খরচ তারা তুলে দিতে রাজি। স্কুলের শিক্ষক তাপস কার্ফা বলেন, ‘‘তন্ময়কে সুস্থ করে তুলতে গোটা স্কুল একজোট হয়েছে। আশা করছি, আরও কিছু সাহায্য ওর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া যাবে।’’

নরেশবাবু জানান, মহকুমাশাসককেও তন্ময়ের পরিবারের পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে। তিনি পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছেন। মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ওই ছাত্রের পরিবারকে সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।’’ তন্ময়ের বাবা তাপসবাবু বলেন, ‘‘এত জনকে পাশে পেয়ে আমার ছেলেও উজ্জীবিত। ও বলেছে, সুস্থ হয়েই ফিরবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE