E-Paper

খাইয়ে, ঘর বেঁধে পেঁচাদের আগলাল পড়ুয়ারা

বুধবার বিকেলে পেঁচাদের কাছছাড়া করতে গিয়ে কেঁদে ফেলে ভাতারের সোঁচালিদা উন্নত প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৭
পেঁচার দেখভালে ব্যস্ত পড়ুয়া। ভাতারের স্কুলে।

পেঁচার দেখভালে ব্যস্ত পড়ুয়া। ভাতারের স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

মিড-ডে মিলের ঘরের কাছে ছটফট করছিল একটা ছোট্ট পেঁচা। খানিক দূরে পড়েছিল আরও একটা। ক্লাস করতে করতেই পড়ুয়াদের চোখ যায় সেই দিকে। ছুটে যায় তিন-চার জন। পেঁচাদু’টিকে দু’হাতে আগলে বুকের কাছে নিয়ে শিক্ষকদের ঘরে হাজির হয় তারা। মাস্টারমশাইদের পরামর্শে ছোট ছোট ব্যাঙ, পোকা-মাকড় ধরে অসুস্থ পেঁচাদের খাওয়ানো হয়। বাসাও তৈরি করে ফেলে তাদের জন্য। কয়েক ঘণ্টা পরে পাখি দু’টি কিছুটা সুস্থ হলে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাদের।

বুধবার বিকেলে পেঁচাদের কাছছাড়া করতে গিয়ে কেঁদে ফেলে ভাতারের সোঁচালিদা উন্নত প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা। সোমনাথ সরেন, বৈদ্যনাথ মুর্মু, অনিক দাস, অর্ক ঘোষরা বলে, “আমরা তো রাতে স্কুলে থাকি না। পেঁচাগুলোর কেউ ক্ষতি করে দিতে পারত। বন দফতরের হাতে তুলে দিয়ে ভালই হয়েছে। ওরা ভাল থাকবে।’’

বন দফতর সূত্রে জানা যায়, পেঁচা দু’টি বার্ন প্রজাতির। বাংলায় অনেকে ‘লক্ষ্মী পেঁচা’ও বলেন। তাদের বয়স ১০-১২ দিন। সম্ভবত বাসা থেকে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছে তারা। এখনও ওড়ার ক্ষমতা হয়নি। তাদের বর্ধমানের রমনাবাগানে পাঠানো হয়েছে। জেলার এডিএফও সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “কয়েক জন শিশুর মধ্যে পাখিদের রক্ষা করার যে বোধ এসেছে, আমরা অভিভূত। ওই পড়ুয়াদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মুখ করে তোলায় উদ্যোগী হব।’’

পড়ুয়ারা জানায়, তারা প্রথমে একটা উঁচু জায়গায় পেঁচা দু’টিকে রাখে। একটি কাপে করে জল খাওয়ানো হয়। পেঁচা দু’টিকে রাতে কোথায় রাখা হবে, সেই চিন্তা মাথায় আসতেই স্কুলের ভিতরে থাকা চৌবাচ্চার উপরে ইট, বাঁশের টুকরো, গাছের ডাল আর পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে ফেলে তারা। সেখানেই কয়েক ঘন্টা আশ্রয় পায় দু’টি। পড়ুয়াদের ঘাড়েও একটি পেঁচাকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষক সৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, “বইয়ের পরীক্ষায় ওই ছাত্রছাত্রীরা কত নম্বর পাবে জানি না। কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় সম্পূর্ণ নম্বর পেয়ে গেল। অসহায়, আর্তদের পাশে যে দাঁড়াতে হয়, পড়ুয়াদের তা শেখাতে পেরে শিক্ষক হিসেবে গর্ব বোধ করছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

owl

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy