Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Chandrayan-3 Moon landing

‘পুজো-যজ্ঞ নয়, চন্দ্রযানে সাফল্য শুধুই বিজ্ঞানের’

বিজ্ঞানীরা থেকে সাধারণ মানুষজন, সকলেরই উৎকণ্ঠা ছিল। সকাল থেকে দেখা যায়, নানা জায়গায় পুজো-পাঠ, যজ্ঞের আয়োজন হয়েছে।

পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া হিন্দি হাইস্কুলে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে চন্দ্রযানের অবতরণ। বুধবার।

পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া হিন্দি হাইস্কুলে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে চন্দ্রযানের অবতরণ। বুধবার। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৪
Share: Save:

চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি স্পর্শ করল বুধবার সন্ধ্যায়। সেই অভিযানের সাফল্য কামনা করে এ দিন সকাল থেকে দুর্গাপুরের বিভিন্ন জায়গায় পুজো-যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। যা নিয়ে খানিক বিস্মিত বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা থেকে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক-গবেষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই অভিযান পুরোটাই বিজ্ঞানের উপরে নির্ভরশীল। সেখানে এ ধরনের কাজ কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। এর সঙ্গে চন্দ্রযানের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

১৪ জুলাই ইসরোর তরফে চন্দ্রযান-৩ রওনা করানো হয়। এর আগে ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ পাঠানো হলেও, তা সফল হয়নি। এ বার তাই বিজ্ঞানীরা থেকে সাধারণ মানুষজন, সকলেরই উৎকণ্ঠা ছিল। সকাল থেকে দেখা যায়, নানা জায়গায় পুজো-পাঠ, যজ্ঞের আয়োজন হয়েছে। নিয়ামতপুরের দেবী মন্দিরে যজ্ঞের আয়োজন করে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। দুর্গাপুরের ইস্পাতনগরীর আইনস্টাইন এলাকার কালীবাড়িতেও যজ্ঞের আয়োজন করা হয় বিজেপির তরফে। স্থানীয় বিজপি নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই আয়োজন বলে জানা গিয়েছে। পারিজাতের দাবি, আগের চন্দ্রাভিযান সফল হয়নি। এ বার যাতে তা সফল হয়, সে উদ্দেশ্যেই যজ্ঞের আয়োজন। সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক এই বিষয়ের সঙ্গে যজ্ঞের কী সম্পর্ক? তাঁর জবাব, ‘‘আমাদের সনাতন ধর্মে যে কোনও শুভ কাজের আগে পূজা-অর্চনা হয়। এটিও একটি শুভ কাজ। এখানে কুসংস্কারের কোনওবিষয় নেই।’’

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য প্রশ্ন তোলেন, ‘‘গত বারও তো নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান হয়েছিল। তাহলে সে বার চন্দ্রাভিযান সফল হল না কেন?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই। এই চন্দ্রযান চলছে বিজ্ঞানের সাহায্যে। এর সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িয়ে দেওয়া হলে মানুষের মনে কুসংস্কার বাড়বে।’’

মানকর কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক অরুন্ময় বৈদ্য জানান, চন্দ্রযানের মত যন্ত্র তৈরি করা ও তা চালনা করা বিজ্ঞানীদের অসীম সাধনার ফল। কোন অবস্থায় চন্দ্রযান কোন দিকে বা পথে কী ভাবে যাবে, তা সম্পূর্ণ নির্ধারণ করেন বিজ্ঞানীরা। গত বার সামান্যর জন্য ব্যর্থ হলেও, এ বার ইসরোর বিজ্ঞানীরা আরও বেশি সচেতন হয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি জানাচ্ছেন, নিপুণ ভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠ ছাড়ার আগে চন্দ্রযান পৃথিবীর কক্ষপথে অনেক বার ঘুরেছে, যাতে তার গতিবেগ বাড়াতে পারে। আবার একই ভাবে, চাঁদের কক্ষপথে বেশ কিছু পাক খেয়েছে, যাতে গতিবেগ কমিয়ে সফল ভাবে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এর মধ্যে ধর্মীয় আচারের কোনও যোগ নেই। চন্দ্রযানের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নিখুঁত গণনা ও বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম। তাই পুজো-যজ্ঞের কোনও ভূমিকা এর পিছনে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ISRO Chandrayan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE