Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

বাঁকে উল্টোল বাস, পড়লাম ছাদ থেকে

রাতে ওড়িশার সীমানায় পৌঁছে আবার অপেক্ষা।

বগপুরে হাবিবুলের বাবাকে ঘিরে পড়শিরা। নিজস্ব চিত্র

বগপুরে হাবিবুলের বাবাকে ঘিরে পড়শিরা। নিজস্ব চিত্র

রাজিবুল মণ্ডল (দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের যাত্রী)
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০২:০১
Share: Save:

গয়নার কারিগর হিসেবে বছর তিনেক কাজ করি মুম্বইয়ের মালাডে। যেখানে আমার বাড়ি, সেই পূর্বস্থলীর বগপুর এলাকার আরও অনেকে এখানে কাজ করেন। ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ার পরে, আটকে পড়েছিলাম সবাই। বাড়ি ফেরার চেষ্টায় ছিলাম গোড়া থেকেই। গত সপ্তাহে খবর পাই, মহারাষ্ট্র সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কিছু বাসের ব্যবস্থা করেছে, যা ছত্তীসগঢ় সীমানা অবধি পৌঁছে দেবে। শুক্রবার ভোরে আমরা ২৩ জনের একটি দল সে রকম একটি বাসে উঠে পড়ি।

পর দিন ছত্তীসগড় সীমানায় একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে আমাদের নামিয়ে দেয় সেই বাস। সেখানে তখন নানা রাজ্যের শ্রমিকেরা অপেক্ষা করছেন বাড়ি ফেরার গাড়ি ধরার জন্য। প্রশাসনের কর্মীদের কাছে নাম লিখিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়। পর দিন একটি ট্রাকে তুলে দেওয়া হয় আমাদের ২৩ জন-সহ মোট ৫৮ জনকে। ওড়িশার সীমানায় পৌঁছনোর জন্য মাথা পিছু একশো টাকা করে নেন ট্রাকের চালক।

রাতে ওড়িশার সীমানায় পৌঁছে আবার অপেক্ষা। সোমবার সকালে একটি বাস এসে পৌঁছয়। বাসের চালক-কর্মী জানান, বর্ধমানের উপর দিয়ে কলকাতা হয়ে উত্তর ২৪ পরগনা যাবেন তাঁরা। ইতিমধ্যে বাসটিতে প্রায় পঞ্চাশ জন যাত্রী ছিলেন। তাই ভিতরে জায়গা ছিল না। মাথা পিছু পাঁচশো টাকা ভাড়ায় রফা হওয়ার পরে, বাসের ছাদে জায়গা হয় আমাদের ২৩ জনের।

বর্ধমানে আমাদের নামিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু ওড়িশা থেকে ঝাড়খণ্ডে ঢোকার পরেই নানা রাস্তায় ঘুরতে থাকে বাসটি। সম্ভবত চালকের রাস্তা চেনা ছিল না। দুপুরে আমরা রাঁচী পৌঁছই। সেখানে একটি হোটেলে ভাত-ডাল খেয়ে আবার রওনা দিই। আধ ঘণ্টা পরে একটি পাহাড় কেটে তৈরি রাস্তা ধরে বাসটি। রাস্তা যে বিপজ্জনক, তা লেখা বোর্ডও ছিল। একটি বাঁকের কাছে আচমকা বাসটি দুলে ওঠে। তা কোনও মতে সামলে ওঠার পরেই আর একটি বাঁকের মুখে পড়ি। সেটি পেরোতে না পেরোতেই দেখা যায় সামনেই আর একটি বাঁক রয়েছে। সে দিক থেকে একটি গাড়ি আসছিল। সেটিকে জায়গা দিতে গিয়েই আমাদের বাসটি উল্টে যায়। আমরা ছাদ থেকে পড়ে যাই।

সবাই কম-বেশি আহত হয়েছিলাম। কাছাকাছি একটি নালা থেকে জল এনে চোখে-মুখে দেওয়া হয়। খানিক পরেই অ্যাম্বুল্যান্স এসে পৌঁছয়। ধাপে-ধাপে সবাইকে আরআইএমএস হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার সকালে জানতে পারি, আমার বগপুর এলাকার হাবিবুল মণ্ডল এবং সমুদ্রগড়ের বুনোপুকুরের বাবু শেখ মারা গিয়েছে।

নাদনঘাট থানা ও প্রশাসনের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন অপেক্ষায় রয়েছি, কখন বাড়ি ফিরব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE