Advertisement
E-Paper

Corruption: মৃতের নামে ঘরের টাকাও ‘জমা’ অন্যের অ্যাকাউন্টে

এই প্রকল্পে গরিব উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির জন্য ধাপে ধাপে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৪০
কালনা ১ ব্লক অফিসে অভিযোগ জানানোর পরে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

কালনা ১ ব্লক অফিসে অভিযোগ জানানোর পরে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের তালিকা ক্রমশ বেড়েই চলেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকায়। সম্প্রতি এক ভিক্ষাজীবী বিশেষ ভাবে সক্ষম যুবক আবাস প্রকল্পে তাঁর নামে বরাদ্দ টাকা অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। মৃতের নামে বরাদ্দ টাকাও একই ভাবে ‘বেহাত’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এর পিছনে তৃণমূল পরিচালিত নান্দাই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। সোমবার কালনা ১ বিডিও-র কাছে ওই পঞ্চায়েতের আরও তিন ব্যক্তি তাঁদের পরিবারের মৃতদের নামে বরাদ্দ করা টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ লিখিত ভাবে জমা দিলেন। তাঁরাও গোটা ঘটনার জন্য পঞ্চায়েতের প্রধান এবং এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। আবাস প্রকল্প নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধেও। যদিও পঞ্চায়েত প্রধান ঝুমুর ঘোষকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এসএমএস-এর জবাব দেননি। তবে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান লিয়াকত শেখ দাবি করেছেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ তুলে কিছু লোক প্রধানকে ফাঁসাতে চাইছেন।’’

এই প্রকল্পে গরিব উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির জন্য ধাপে ধাপে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ দিন ব্লক অফিস থেকে বেরিয়ে পেশায় খেতমজুর দুপসা গ্রামের ভ্যাবল মোল্লা বলেন, ‘‘মা নুরনাহার বিবি বছর সাতেক আগে মারা গিয়েছেন। সম্প্রতি জানতে পেরেছি, মায়ের নামে সরকারি প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ হলেও, সে টাকা অন্য লোকে পেয়েছে। ওই টাকা যাতে আমাকে ঘর তৈরির জন্য দেওয়া হয়, বিডিও-কে তা জানিয়েছি।’’

কুত্তিরডাঙা গ্রামের ষাটোর্ধ বৃদ্ধা সুশীলা বিশ্বাসের দাবি, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর নামে আবাস যোজনায় টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দুর্নীতি করে সে টাকা অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে পাঠিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কোনও রকমে একটি টিনের ঘরে থাকি। ওই টাকাটা পেলে, নিজের একটা ভাল ঘর তৈরি হত।’’

ওই গ্রামেরই শিখা মাধুর বক্তব্য, ২০১৭ সালের নভেম্বরে তাঁর বাবা মহাদেব মাধু মারা দিয়েছেন। তাঁর নামে সরকারি প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ হলেও টাকা তাঁরা হাতে পাননি। তাঁর পিসি সুষমা বৈরাগ্যের অভিযোগ, ‘‘বাপ-মা মরা মেয়েটা আমার কাছেই থাকে। একটা ঘর হলে ভাল হত।’’ মৃত তিন জনের পরিবারের অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন, তাঁদের প্রাপ্র্য টাকা নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, তাতে যুক্ত রয়েছেন পঞ্চায়েতের প্রধান
ঝুমুর ঘোষ।

আবাস প্রকল্পে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের প্রাক্তন নান্দাই অঞ্চল সভাপতি কিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। আসাননগর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছেন, চাকরিজীবী কিশোরের দোতলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাঁর নিকটাত্মীয়ের নামে এই প্রকল্পের সুবিধা তিনি নিয়েছেন। যদিও কিশোরের দাবি, ‘‘আমার নামে জমি, বাড়ি কিছুই নেই। একটি সংস্থায় অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করি। আমার নামে যে বাড়ির কথা বলা হচ্ছে, তা দাদার তৈরি। বছর খানেক আগে জানতে পারি আবাস যোজনায় স্ত্রীর নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে। সে টাকায় মায়ের জন্য ছোট্ট একটা জায়গায় ঘর তৈরি করেছি। আমি কোনও অন্যায় কাজ করিনি।’’

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নান্দাই থেকে লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ায় ব্লক প্রশাসন একটি তদন্ত দল গঠন করেছে। বিডিও (কালনা ১) সেবন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘‘জয়েন্ট বিডিও-র নেতৃত্বে অভিযোগগুলির তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি দল গড়া হয়েছে। তাঁরা প্রতিটি অভিযোগ খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। সপ্তাহ খানেক পরে, তাঁরা রিপোর্ট জমা দেবেন।’’

বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা শুধু জীবিত মানুষই নয়, মৃতেরও অর্থ আত্মসাৎ করে। মানুষ নিজেই এর প্রতিবাদ শুরু করেছেন। প্রশাসনিক কর্তারা শিরদাঁড়া সোজা রেখে তদন্ত শুরু করুক।’’ পূর্ব বর্ধমানের জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘দেশ জোড়া বিজেপির দুর্নীতি। ওদের মুখে এ সব মানায় না। এ ধরনের অভিযোগ প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। কোনও রাজনৈতিক রং দেখা হবে না।’’

Corruption Pradhan Mantri Awas Yojana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy