বাঁ দিকে, জাতীয় সড়কের ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি। ডান দিকে, রাস্তায় পড়ে আর্জনা। —নিজস্ব চিত্র।
আবর্জনা সরানো নিয়ে বৈঠকের পরে তিন সপ্তাহ কাটতে চলল, অথচ শক্তিগড়ের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশের হাল ফিরল না এখনও। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অভিযোগ, মে মাসে বর্ধমান মহকুমাশাসকের (সদর) দফতরে একটি বৈঠকে দশ দিনের মধ্যে রাস্তার ধার থেকে আবর্জনা সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখনও সেখানে আবর্জনা ফেলছেন। জাতীয় সড়ত কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এমনটা চলতে থাকলে জাতীয় সড়কের নিকাশি বেহাল হয়ে পড়বে। বর্ষায় রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে গেলে যেমন রাস্তার ক্ষতি হবে, তেমনই দুর্ঘটনার প্রকোপও বাড়বে।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যে বেসরকারি সংস্থাটি রয়েছে তার সিনিয়র ম্যানেজার (আইন ও প্রশাসক) সুভাষ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “ওই বৈঠকের পরে মাত্র একটি জায়গাতেই আবর্জনা ফেলছেন না ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা। বাকি জায়গাগুলো এখনও আবর্জনার স্তুপ হয়ে রয়েছে।” ওই সংস্থার আরও দাবি, গত বছর পুজোর পর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বারবার চিঠি পাঠিয়ে ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের জাতীয় সড়কের উপরে, পাশে বা নিকাশি নালায় আবর্জনা ফেলতে বারণ করা হয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা পালন করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। এমনকী জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প আধিকারিক কৃষ্ণ মুরারি গত ৩০ মে বর্ধমানের জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানান, শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা যে ভাবে রাস্তায় আবর্জনা ফেলছেন, তাতে দূষণ ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদেশি ও ভিন রাজ্যের পর্যটকরা রাস্তার উপরে আবর্জনার স্তূপ দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, শক্তিগড় এলাকা এমনিতেই দুর্ঘটনাপ্রবণ। যাতায়াতের সময় বাস ও গাড়িগুলি শক্তিগড়ে এমন ভাবে দাঁড়ায় তাতে দুর্ঘটনা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এরপরেই ২৯ মে বর্ধমান (সদর) মহকুমাশাসক অরুণ রায়ের উপস্থিতিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার কর্তারা এবং ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন, গত বছরের ১২ অগস্ট এবং এ বছরের ১৫ মে তাঁরা ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা আবর্জনা সরিয়ে দেবেন। কিন্তু আবর্জনা সরানো তো দূরের কথা, দিন দিন আরও আবর্জনা স্তুপীকৃত হয়েছে। প্রমাণ স্বরূপ ওই দিনের সভায় আবর্জনার ছবিও পেশ করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কার্যত হুমকির সুরে জানিয়ে দেন, ব্যবসায়ীরা আবর্জনা ফেলা বন্ধ ও আবর্জনা না সরালে তাঁরা রাস্তার ধারে তারের বেড়া করে দিতে বাধ্য হবেন। বর্ধমান ২-এর বিডিও অভিযোগ করেন, ল্যাংচার দোকান থেকে প্রচুর আবর্জনা জাতীয় সড়ককে অবরুদ্ধ করে ফেলছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ রাস্তায় সৌন্দ্যর্যায়ন বাড়াতে চাইলেও তাতে বাধা পড়ছে।
জবাবে ল্যাংচা ব্যবসায়ী সমিতির ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গার দাবি তোলেন। বিডিও তাঁদের আশ্বাস দেন, কয়েক মাসের মধ্যে ‘সলিড অ্যান্ড লিকুইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ চালু হয়ে গেলে এই ধরণের সমস্যা আর থাকবে না। তবে এরপরে দশ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আবর্জনা সরেনি। ল্যাংচা ব্যবসায়ী সমিতির যদিও দাবি, তাঁরা আবর্জনা সরানোর কাজ শুরু করেছেন। মহকুমাশাসক অরুণ রায় বলেন, “রাস্তার ধারে বা নিকাশি নালায় আবর্জনা ফেলতে দেওয়া হবে না। তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। আবর্জনা ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের বালতি রাখার জন্য বলা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ব্যবসায়ীরা রাস্তায় আবর্জনা ফেলছেন কি না তা দেখার দায়িত্ব পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy