দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে আনা অনাস্থায় সরে যেতে হল তৃণমূলের প্রধানকে। ভাতারের আমারুন ১ ও বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুর ২— দু’টি পঞ্চায়েতে এমন ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবারই আবার আস্থা ভোটে হেরে মন্তেশ্বরের দেনুড় পঞ্চায়েতের বোর্ড হাতছাড়া করল বামেরা।
ভাতারের আমারুন ১ পঞ্চায়েতে ৯ সদস্যের মধ্যে আট জনই তৃণমূলের। ১৪ জুন উপপ্রধান প্রদ্যুৎ রায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের পাঁচ সদস্য দলেরই প্রধান আমিরুন্নেসা বেগমের বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠি দেন বিডিওকে। মঙ্গলবার বিডিও তার ভিত্তিতে বৈঠক ডাকেন পঞ্চায়েত দফতরে। সেখানে পাঁচ সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের ৬ মাস পর থেকেই প্রধান-উপপ্রধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তার জেরে বছরখানেক পঞ্চায়েত তালাবন্ধ ছিল। বিধানসভা ভোটের আগে জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর হস্তক্ষপে তালা খোলে। প্রধান নিয়মিত ভাবে পঞ্চায়েতে যাতায়াত শুরু করেন। কিন্তু ওই পাঁচ সদস্য আসছিলেন না। তাতে নানা কাজ আটকে যাচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে ওই পাঁচ জনের সদস্যপদ বাতিল করার দাবিতে প্রধান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, এর মধ্যে ওই পাঁচ সদস্য দু’বার অনাস্থা আনতে চাইলেও ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারীর হস্তক্ষেপে তা মিটে গিয়েছিল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, সমস্যা মেটাতে ভাতারের নতুন বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল, জেলা সভাধিপতি, দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ থেকে প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরারা নানা সময়ে বৈঠক করেছেন। ভাতার ব্লক তৃণমূল সভাপতি কমল সোম ওই পাঁচ জনকে দল থেকে বরখাস্ত করার জন্য সভাধিপতিকে চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারই মধ্যে প্রদ্যুৎবাবুরা প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। উপপ্রধান প্রদ্যুৎবাবু বলেন, “দলের নির্দেশ আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রধান আমাদের কোনও কথা শুনতে রাজি হননি। তাই অনাস্থা আনি।” প্রধান শুধু বলেন, “যা বলার দলকে বলব।”
বর্ধমান ২ ব্লকের বৈকুন্ঠপুর ২ পঞ্চায়েতে ১৮ জন সদস্যই তৃণমূলের। প্রধান সুব্রত পালের বিরুদ্ধে দলেরই ১২ জন সদস্য অনাস্থা আনেন। তার পরেই প্রধান পদত্যাগের চিঠি দেন বিডিওকে। সোমবার বিকেলে ব্লক অফিসে শুনানি হয়। এ দিন পদত্যাগ গৃহীত হয়েছে। প্রধান বলেন, “আমি ওই অঞ্চলে তৃণমূলের সভাপতি। তার পরেও আমার বিরুদ্ধে সদস্যেরা অনাস্থা আনায় সম্মানহানি হয়েছে। তাই পদত্যাগ করেছি।” তবে দলের ১২ জন সদস্য বিডিওকে জানিয়েছিলেন, সদস্যদের উপেক্ষা করে পঞ্চায়েতে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন প্রধান। ওই অঞ্চলে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসিরুল ইসলামেরও অভিযোগ, “সদস্যদের দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করছিলেন প্রধান। কোনও আলোচনায় ডাকছিলেন না। তাই অনাস্থা আনেন সদস্যেরা।” প্রধান অবশ্য এ সবের কোনও জবাব দেননি।
মন্তেশ্বরের দেনুড়ে ১০টি আসনের মধ্যে সাতটিতে বামেরা ও তিনটিতে তৃণমূল জিতেছিল। সম্প্রতি বিডিও-র কাছে প্রধান বিধান মাঝির বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ে সেখানে উপপ্রধান কৃষ্ণারানি ঘোষ-সহ বামেদের চার সদস্যের সই ছিল। তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্যও লিখিত আবেদন জানান। সেই প্রস্তাবের উপরে এ দিন তলবি সভা হয়। হাজির ছিলেন আট সদস্য, যাঁদের পাঁচ জন সিপিএমের। প্রধান হাজির ছিলেন না। ৮-০ ভোটে হেরে যান তিনি। পরে বিধানবাবু দাবি করেন, ‘‘লোভে পড়ে দলের কিছু সদস্য দলত্যাগ করেছেন।’’
দেনুড়ে অনাস্থা এনে সিপিএম প্রধানকে সরানোর পরে মন্তেশ্বর ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২টিই দখল করল তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত ভোটে ১০টি পঞ্চায়েতে জিতেছিল তৃণমূল। তিনটি ছিল বামেদের হাতে। ৩৯ বছর পরে এ বারই প্রথম মন্তেশর বিধানসভা বামেদের হাতছাড়া হয়। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, তার পরেই এলাকায় বামেদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলি নিজেদের দখলে নেওয়ার ছক কষা হয়। প্রথমে জামনা, তার পরে দেনুড় দখল করা হল। শুধু বাঘাসন এখনও বামেদের দখলে রয়েছে।
মন্তেশ্বরের বিধায়ক তথা দলের ব্লক সভাপতি সজল পাঁজা বলেন, ‘‘মানুষ আর এই ব্লকে কোথাও সিপিএমকে চাইছেন না। বামেদের পঞ্চায়েত সদস্যেরা তাই আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। শীঘ্রই দেনুড় পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে।’’ তাঁর দাবি, বাঘাসনেও শীঘ্রই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy