কোথাও গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি, কোথাও খাজা, কোনও কোনও জায়গায় আবার বিলি হল লাড্ডু, লুচি, তরকারি। বুধবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিন কালনা মহকুমায় তৃণমূলের উদ্যোগে তৈরি বিভিন্ন মঞ্চে এই ছবি দেখা যায়। গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্র বড় পর্দায় মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগেও অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার করা হয় কিছু এলাকায়। মন্দির উদ্বোধন নিয়ে তপ্ত হয়েছে রাজনীতিও।
তৃণমূল নেতাদের দাবি, বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত একটি করে মঞ্চ তৈরি করে বড় পর্দায় অনুষ্ঠান দেখানো হয়। জোগান কম হওয়ায় সব জায়গায় বড় পর্দার ব্যবস্থা করা যায়নি। কালনা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে বড় আকারের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছিল। মণ্ডপ সংলগ্ন জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের ছবি ছিল। এলাকা ছেয়ে দেওয়া হয় দলীয় পতাকায়। সকাল থেকে বড় পর্দায় দেখানো হয় হরিনাম সঙ্কীর্তনের অনুষ্ঠান। মাইকে বাজে ভক্তিমূলক গান। বেলা বাড়তেই হাজির হয় কীর্তনের দল।
তৃণমূল ও বিজেপি দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে। বিজেপির দাবি, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের মতো নানা ঘটনা ঘিরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মুর্শিদাবাদে অশান্তি। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সন্দীপ নন্দী বলেন, “হিন্দুত্ব নিয়ে তৃণমূল যে চাপে পড়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে।” বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিৎ তা-র অভিযোগ, “দুর্নীতি, অরাজকতা চরম পর্যায়ে গিয়েছে। মন্দির নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। কিন্তু যে সব মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তার পুনর্গঠনে সরকারের ভাবনা নেই।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা, “বিজেপির মুখোশ খুলে গিয়েছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।” সিপিএমের বক্তব্য, দু’টি দলেরই সরকারই মানুষের প্রতিদিনের সমস্যার সমাধান করতে পারছে না।
নাদনঘাট পঞ্চায়েত এলাকায় নাম সঙ্কীর্তনের আসরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পুরোহিত এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষকে। প্রসাদ হিসেবে বিলি করা হয় খাজা। নসরৎপুরে খাওয়ানো হয় খিচুড়ি। বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, মাত্র আটটি জায়গায় বড় পর্দা লাগানো হয়। বাকি এলাকায় টিভি-তে অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে।
সংস্কৃতি লোকমঞ্চে মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়। ছিলেন জেলাশাসক আয়েশা রানি এ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার, বিধায়ক খোকন দাস, বর্ধমানের পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকার। মিষ্টির প্যাকেট বিলি হয়। অন্য দিকে, শহর তৃণমূলের উদ্যোগে কার্জন গেটে লাড্ডু বিলি হয়। শহরের জোড়া মন্দিরেও অনুষ্ঠানের সম্প্রচার হয়। গলসি বাজার, ভূঁড়ি, রামগোপালপুর-সহ অনেক এলাকায় বড় পর্দায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হয়। করানো হয় উপস্থিত দর্শকদের মিষ্টিমুখ। কাটোয়া শহরের সংহতি মঞ্চে বড় পর্দায় অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে। দাঁইহাট তৃণমূল কার্যালয়ে কীর্তন হয়। হয় প্রসাদ বিলিও।
আউশগ্রামের অভিরামপুরে আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে বড় পর্দা লাগিয়ে মন্দিরের উদ্বোধন দেখানো হয়। স্থানীয় পুরোহিতদের সংবর্ধনা জানানো হয়। জামালপুর ব্লকের ১৩টি অঞ্চলেই বড় পর্দায় উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখানো হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)