Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Truck Drivers

Barakar: পাঁচ দিন ধরে ডুবুরডিহিতে ‘আটকে’ ট্রাক চালক-খালাসিরা, ভোগান্তি

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ‘অবৈধ’ কয়লার রাজ্যে প্রবেশ রুখতে টানা অভিযান চালাচ্ছে। তার জেরেই আটকে পড়েছেন শতাধিক ট্রাক চালক ও খালাসি।

ট্রাকের কেবিনেই রান্না। ডুবুরডিহিতে শুক্রবার।

ট্রাকের কেবিনেই রান্না। ডুবুরডিহিতে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বরাকর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২২ ০৬:৪০
Share: Save:

চেকপোস্ট থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে বটগাছের তলায় বসে মোবাইলে কথা বলছিলেন মহম্মদ আবিদ। খুবই উদ্বিগ্ন শোনাচ্ছিল তাঁর কণ্ঠস্বর। চোখেমুখে স্পষ্টতই হতাশার ছাপ। জানালেন, পরের বছর তাঁর ১৬ বছরের মেয়ে, উম্মি খানম ঝাড়খণ্ড বোর্ডে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। আগামী সোমবার ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ জমা দিতে হবে। শুক্রবারই ট্রাকের মালিকের থেকে টাকা নিয়ে মেয়েকে তা দেওয়ার কথা ছিল আবিদের। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, “পাঁচ দিন ধরে আটকে আছি চেকপোস্টে। কোথা থেকে, কী হবে, জানি না।”

আবিদ একা নন। তাঁর মতো অনেকেই পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় পশ্চিম বর্ধমানের ডুবুরডিহি চেকপোস্টে আটকে পড়েছেন। কারণ, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ‘অবৈধ’ কয়লার রাজ্যে প্রবেশ রুখতে টানা অভিযান চালাচ্ছে।

এই অভিযানের জেরেই সীমানায় আটকে পড়েছেন শতাধিক ট্রাক চালক ও খালাসি। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই ঝাড়খণ্ড এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে কয়লা নিয়ে এসেছেন। ঝাড়খণ্ডের আম্রপালি থেকে কয়লা নিয়ে ডানকুনি যাচ্ছেন প্রেম মাহাতো। তিনি বলেন, “কয়লা বোঝাই করে গন্তব্যে নামিয়ে বাড়ি ফিরতে তিন দিন সময় লাগে। কিন্তু এ বার চেকপোস্টেই পাঁচ দিন ধরে আটকে রয়েছি। মালিক তিন দিনের খোরাকি দিয়েছিলেন। তা শেষ। এখন নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ডাল-ভাত জোগাড় করছি।” শুক্রবার চেকপোস্টে গিয়ে দেখা গেল, চালকের কেবিনে বসেই রান্না করছেন সঞ্জয় কুম্ভকার। তিনি জানালেন, ধানবাদের গোবিন্দপুর থেকে কয়লা নিয়ে দুর্গাপুরের একটি কারখানায় যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “গত সোমবার বেরিয়েছি। সে দিন রাতেই ফেরার কথা। কিন্তু এ নিয়ে পাঁচ দিন আটকে রয়েছি।” চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, চাল, ডাল, আনাজ জোগাড় করতে কল্যাণেশ্বরী বাজারে যেতে হচ্ছে। জলও আনতে হচ্ছে অনেকটা দূর থেকে। সঞ্জয়ের আক্ষেপ, তাঁর বাড়ি ডুবুরডিহি থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু কয়লা বোঝাই ট্রাক ছেড়ে যেতে পারছেন না।

একই পরিস্থিতি খালাসিদেরও। রোশন কুমার নামে এক জন কাঁদতে-কাঁদতে জানান, সংসারে অভাবে দিন দশেক আগেই এই পেশায় এসেছেন। বিহারের জাহানাবাদের বাসিন্দা তিনি। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। বাবা-মা খুব চিন্তায় রয়েছেন।”

তবে এই পরিস্থিতিতেও অভিযানে কোনও রকম ছাড় দেওয়া হবে না বলেই জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তমের নির্দেশ, কাগজপত্র ঠিক থাকলে ট্রাক ছাড়তে কোনও দেরি হবে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোলিয়ারি নথি পাঠাতে দেরি করলে, তাঁদের কিছু করার নেই। এ দিনের অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যদি কোনও চালকের খাবার বা পানীয় জলের সমস্যা হয়, তা হলে মানবিকতার খাতিরেই আমরা পাশে দাঁড়াব। কিন্তু নথি পরীক্ষা শেষ না হলে, ট্রাক ছাড়া হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Truck Drivers Suffering
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE