নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভে শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার (ডিএসপি) কোকআভেন প্ল্যান্টে রবিবার গভীর রাতে ‘গ্যাস লিক’ হওয়ায় দু’জন ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতরা হলেন ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার জামগড়া গ্রামের সমীর চক্রবর্তী (৫০) এবং আরতি গ্রামের শেখ হাপিজুল (৩১)। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আরও দু’জন। এই দুর্ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন কর্মী সংগঠন কারখানায় বিক্ষোভ দেখায়। ডিএসপি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সোওয়া ১টা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে। কোকআভেন প্ল্যান্টের ৩ নম্বর ব্যাটারির কাছে ঠিকা শ্রমিক সমীরবাবু ও শেখ হাপিজুলকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন সহকর্মী প্রবীর বসু ও শেখ ফরিউদ্দিন। তাঁরা বাকিদের ডেকে পাঠান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা দু’জনও অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত চার জনকেই প্ল্যান্ট মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডিএসপি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দু’জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আপাতত তাঁরা বিপদমুক্ত বলে ডিএসপি সূত্রে জানানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ঠিকা শ্রমিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। ঠিকা শ্রমিকদের হাতে কোনও গ্যাস মনিটর থাকে না। ফলে গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গেলে বোঝার উপায় থাকে না।
এ দিন সকালে ঠিকা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে তৃণমূল নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ঠিকা শ্রমিকরা ইডি (ওয়ার্কস)এর দফতর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। সিটু অনুমোদিত ‘হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নে’র পক্ষ থেকেও কোকআভেন প্ল্যান্টের জিএমের দফতরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কাল, বুধবার ইডি (ওয়ার্কস)এর দফতরে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘ডিএসপিতে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা লেগেই আছে। মৃত্যু মিছিল রুখতে না পারলে ইস্পাত শিল্পের বিশ্বজোড়া মন্দার সময়ে ডিএসপি’র ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নতুন করে শুরু করার দাবি জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে।’’
অবিলম্বে নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা নতুন করে শুরু করার দাবি জানিয়েছেন বিএমএস নেতা অরূপ রায়ও। ডিএসপি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কীভাবে গ্যাস লিকের ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাও খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালে ডিএসপিতে গ্যাস লিক হয়ে দুই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরেও একাধিকবার গ্যাস লিকের ঘটনা ঘটেছে বলে শ্রমিকদের দাবি। যদিও ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর পাওয়া যায়নি। গত জুলাইয়ে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ, সিআইএসএফ ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উদ্যোগে হঠাৎ গ্যাস লিক হলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা আসার আগে কী করণীয় তা দেখাতে বিশেষ মহড়ার আয়োজন করা হয়। কিন্তু তারপরেও রবিবার রাতে ঘটে গেল দুই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা।
ডিএসপি’র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক চিন্ময় সমাজদার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘সাসপেন্ড’ করা হয়েছে জিএম (নিরাপত্তা) নবারুণ রায়কে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy