রথের রশিতে প্রথম টান দেন মহিলারা। সেই প্রথা ৬০ বছর ধরে চলে আসছে আউশগ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিছে, আউশগ্রামের রথ গোস্বামী পরিবারের হলেও তা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। রথযাত্রায় শামিল হন সব ধর্মের মানুষ। হাটতলায় বসে মেলা। চলে প্রায় দশ দিন।
রথের সূচনা করেন গোস্বামী পরিবারের পূর্বপুরুষ গোবর্ধন গোস্বামী। ওই পরিবারের সদস্য মিহির গোস্বামী বলেন, “নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি সারা বছর পূজিত হয় গিরিধারী মন্দিরে। রথের দিন ওই মূর্তি তিনটি রথে চাপিয়ে হাটতলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের মহিলারা রথের রশিতে টান না দিলে যাত্রা শুরু হয় না।”
পরিবারের বধূ সুরেখা গোস্বামী, চায়না গোস্বামী, রত্না গোস্বামী, মৃন্ময়ী গোস্বামীরা বলেন, “ গ্রামের অন্য মহিলারাও রথের রশিতে টান দেওয়ার জন্য মন্দিরে আসেন। সারা বছর এই দিনটার অপেক্ষায় থাকি। কোনও উৎসবের সূচনা মহিলাদের হাতে হচ্ছে, এটা একটি ইতিবাচক ঘটনা। আগে পরিবারের বধূরা সাধারণত বাড়ির বাইরে যেতে পারতেন না। এই প্রথার মাধ্যমে মহিলাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন পূর্বপুরুষেরা।” প্রায় ১২ ফুট উচ্চতার পঞ্চচূড়া রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি নিয়ে গিরিধারী মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু হয় বিকেলে। ঢাক বাজিয়ে শোভাযাত্রা যায় আউশগ্রাম বাস স্ট্যান্ডের কাছে হাটতলায়। সেখানে অস্থায়ী মন্দির করে বিগ্রহের পুজো হয়। রাতে বিগ্রহ-সহ রথকে আনা হয় মন্দিরে।
আউশগ্রামের দিগনগরে রাজ আমলের ঐতিহ্য মেনে জগন্নাথদেবকে নিবেদন করা হয় ৫২ ভোগ। রথে চাপানোর আগে মন্দিরে জগন্নাথদেবকে ভোগ দিয়ে পুজো করা হয়। তার পরে টান পড়ে রথের রশিতে। শামিল হন প্রচুর মানুষ। জনশ্রুতি রয়েছে, দিগনগরে জগন্নাথ দর্শন না করলে পুরীর জগন্নাথ দর্শনের পুণ্যলাভ হয় না। তাই পুরীতে জগন্নাথের পুজো দিয়ে অনেকেই আসেন দিগনগরে। আউশগ্রামের বৈকুণ্ঠপুর, তকিপুর, পাণ্ডুক, গোবিন্দপুর, গুসকরার কমলনগরেও ধুমধাম রথাযাত্রা হয়েছে। এ দিন দিগনগরে রথযাত্রার সূচনা করেন বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল। ছিলেন আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার, আউশগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায়। রথ নিয়ে যাওয়ার সময়ে চাকা বসে গিয়েছিল। সেখান থেকে বিগ্রহগুলি কোলে করে কদমখণ্ডীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মাটি থেকে চাকা কুলে রথ আনা হয় সেখানে।
কাটোয়ায় রথতলায় রথ নেই। তবু অন্য রথের শোভাযাত্রা আসে রথতলায়। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে জগন্নাথের পুজো হয় সেখানে। এ দিন বারোয়ারিতলার রথের মাঠে জগন্নাথ দর্শনের সূচনা করেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। আয়োজকদের পক্ষে বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগে এই মাঠ থেকে রথের শোভাযাত্রা বেরোত। এখন তা হয় না। পরিবর্তে আমরা জগন্নাথদেবের পুজোর আয়োজন করি। মেলাও বসে।’’ কাটোয়ার ঘোষেশ্বরতলায় মাসির বাড়িতে ভক্তদের মিলনমেলার ব্যবস্থা করেছেন ইসকন অনুমোদিত হরেকৃষ্ণনাম হট্ট মন্দির কর্তৃপক্ষ। সাত দিন ধরে চলবে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
দাঁইহাট শহরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে জগন্নাথতলায় নবারুণ সঙ্ঘের পরিচালনায় মন্দিরে পুজো হয়। রথের শোভাযাত্রা বেরোয়। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্ধমান রাজাদের হাত ধরেই রথযাত্রা শুরু হয়েছিল।
রথযাত্রা পালিত হয়েছে ভাতারেও। ভাতার জগন্নাথ সেবা সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত রথের শোভাযাত্রা কুলচণ্ডা মহাপ্রভুতলা থেকে শুরু হয়ে ভাতার বাজার অতিক্রম করে ভাতার হাইস্কুল মাঠে মাসির বাড়িতে শেষ হয়। এখানে ১১ দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠান হবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। কর্জনা গ্রামে শতাব্দী প্রাচীন রথযাত্রায় প্রচুর মানুষ হাজির হন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)