Advertisement
E-Paper

কালনা হাসপাতালে ‘হামলা’য় ধুন্ধুমার

বিকেল ৩টে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন কালনার পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ। সুপারের কার্যালয়ে দফায়-দফায় বৈঠক হয়। এর পরে সুপার, পুরসভার প্রশাসক, পুলিশের কর্তারা নার্সদের আশ্বাস দেন, দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৩৮
তপ্ত: বাঁ দিকে, ঘটনার পরে নার্সদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

তপ্ত: বাঁ দিকে, ঘটনার পরে নার্সদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

এক অন্তঃসত্ত্বার ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগে হাসপাতালে হামলার অভিযোগ উঠল পরিবার-পড়শিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সোমবার পূর্ব বর্ধমানের কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ঢুকে কিছু লোকজন এক তলা থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ায়। নার্স, নিরাপত্তারক্ষী-সহ অনেককে মারধর করা হয়। নিগৃহীত হন ডাক্তারেরাও। ঘটনার পরে, পরিষেবা বন্ধ করে নিরাপত্তার দাবি ঘণ্টা চারেক বিক্ষোভ দেখান নার্সেরা। পুলিশ জানায়, হামলা জড়িত অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের মির্জাপুর এলাকায় বিউটি বিবি নামে বছর কুড়ির এক অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালের চার তলায় ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গোড়া থেকেই তাঁর গর্ভে ভ্রূণের স্পন্দন তেমন পাওয়া যায়নি। সোমবার অবস্থা আরও খারাপ হয়। এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ ভ্রূণের কোনও স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে না বলে রোগীর পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এর পরেই মির্জাপুর, নিভুজি ও কোম্পানিডাঙা এলাকা থেকে রোগীর আত্মীয়-পরিচিতদের প্রায় ২৫ জনের একটি দল হাসপাতালে চড়াও হয়। তাঁদের দাবি, চিকিৎসার গাফিলতিতেই ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্সদের হেনস্থা করে দলটি। এর পরে হাসপাতাল জুড়ে যেখানে যে কর্মীকে তারা দেখতে পেয়েছে, মারধর করেছে। হাসপাতালের কর্মীরা জানান, আচমকা এমন হামলার দিশাহারা হয়ে যান তাঁরা। ভয়ে নানা জন নানা জায়গায় লুকিয়ে পড়েন। এক জন নার্স ও ডাক্তারকে হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে একটি ঘরে তালা দিয়ে রেখে দেওয়া হয় বলেও হাসপাতাল সূত্রের দাবি।

খবর পেয়ে খানিকক্ষণের মধ্যে কালনা থানার ওসি রাকেশ মিশ্রের নেতৃত্বে পুলিশের বড় বাহিনী এবং র‍্যাফ পৌঁছয়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসডিপিও (কালনা) শান্তনু চৌধুরী। পুলিশ আসার পরে, বিভিন্ন ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নার্স, ডাক্তার, কর্মীরা। এর পরেই নার্সেরা সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাইয়ের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তাঁরা অভিযোগ করেন, হাসপাতাল জুড়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। হামলাকারীদের হাতে প্রহৃত হতে হয়েছে তাঁদের প্রায় ২০ জনকে। করোনা পরিস্থিতিতে যখন ঝুঁকি নিয়ে পরিষেবা দিচ্ছেন, তখন এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক বলে দাবি করেন তাঁরা।

ক্ষুব্ধ নার্স দীপিকা পাল, সুজাতা বিশ্বাস, স্বর্ণলতা মণ্ডল, কুমকুম গড়াইদের আরও অভিযোগ, এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তা নেই। পুলিশ ক্যাম্প, সিভিক ভলান্টিয়ারেরা থাকলেও তাঁরা কোনও সাহায্য করতে পারেননি। পুলিশ-কর্তাদের কাছে তাঁরা অভিযোগ করেন, হামলা চালিয়েও বুক ফুলিয়ে ঘোরাফেরা করছে দোষীরা। তিনি নিজে প্রহৃত হয়েছেন অভিযোগ করে সুজাতাদেবী বলেন, ‘‘হামলাকারীরা আমাদের কোনও কথাই শুনতে চায়নি। পরিষেবা দিতে এসে এ ভাবে মার খেতে হবে, কখনও ভাবিনি!’’

বিকেল ৩টে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন কালনার পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ। সুপারের কার্যালয়ে দফায়-দফায় বৈঠক হয়। এর পরে সুপার, পুরসভার প্রশাসক, পুলিশের কর্তারা নার্সদের আশ্বাস দেন, দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার আবেদন জানান তাঁরা। কিন্তু নার্সেরা সুপারের কার্যালয়ে সামনে বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খানিক পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়, ঘটনায় অভিযুক্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর পরেও পরিষেবা চালু না করলে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিকেলে সাড়ে ৫টা নাগাদ কাজে ফেরেন নার্সেরা।

হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই বলেন, ‘‘চূড়ান্ত নিন্দনীয় ঘটনা। গোটা হাসপাতাল জুড়ে হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে।’’ পুলিশ জানায়, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। ওই অন্তঃসত্ত্বার পরিজন খাদেম শেখের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর থেকে নার্সের দুর্ব্যবহার করছিলেন। কোনও ওষুধ দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের গাফিলতিতেই বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে।’’ হামলায় কারা জড়িত, তা তাঁদের জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি। হাসপাতালের সুপার অবশ্য চিকিৎসায় কোনও গাফিলতির কথা মানতে চাননি।

Kalna Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy