বিসি রোডের বাজারে কাঁচির পাত দিয়ে আপেল থেকে মোম তুলছেন জেলাশাসক। ছবি: উদিত সিংহ।
গিয়েছিলেন বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে। ফিরলেন ৪২ কেজি মোম-মাখানো আপেল নিয়ে।
পুরপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে খোদ জেলাশাসককে সোমবার বিকেলে দেখা গেল বিসি রোডের উপর একের পর এক ফলের দোকানে গিয়ে আপেলের গা থেকে মোম চেঁছে তুলছেন। ক্রেতাদের সামনেই বেআব্রু হয়ে গেল চকচকে আপেলের রহস্য।
প্রথটা থতমত হয়ে গেলেও পরে ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই এমন আচমকা অভিযানকে স্বাগত জানান। দাবি ওঠে, শুধু সব্জি বা ফলের দোকানে নয়, মাছের বাজারে কী ভাবে মানুষকে ঠকানো হয় তাও দেখুক প্রশাসন। প্রশাসনের কর্তারাও জানান, যে কোনও ছুটির দিন আচমকা হানা দেওয়া হবে।
আর জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “আচমকা কয়েকটি দোকানে হানা দিয়ে ৪২ কিলোগ্রাম আপেল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলিকে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে মোম মাখানো আপেল বিক্রির খবর পেলে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পেশায় চিকিৎসক, বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “আপেলের গা চকচক করার জন্য মোম লাগানো হচ্ছে। গোটা বাজার জুড়েই এ ভাবে আপেল বিক্রি করে ঠকানোর প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। আশ্চর্য ব্যাপার যে প্রতিটি দোকানেই মোম মাখানো ও মোম ছাড়া আপেল রয়েছে। বোধা যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা সবটাই জানেন।’’
এ দিন আসানসোল থেকে বেলা চারটে নাগাদ বর্ধমানের তেঁতুলতলা বাজারে পৌঁছন জেলাশাসক। পুরপ্রধান আগেই তাঁর অপেক্ষা করছিলেন। প্রথমেই তেঁতুলতলার ওয়াকফ এস্টেট বাজারে যান তাঁরা। সেখানে ইলেক্ট্রনিক্স দাঁড়িপাল্লাগুলি পরীক্ষা করেন জেলাশাসক। নথিপত্র দেখে সন্তুষ্ট হওয়ার পর রানিগঞ্জ বাজারের দিকে যাওয়ার সময় শিবতলায় বেশ কয়েকটি দোকানে সাধারণ দাঁড়িপাল্লা দেখেন। বেশ কয়েকটি বাজেয়াপ্তও করেন। একটি দোকানের দাঁড়িপাল্লায় দড়ি লাগানো ছিল, আবার একটি দোকানের দাঁড়িপাল্লা ভাঙা থাকায় জেলাশাসক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ব্যবসায়ীদের জানান, দড়ি লাগানো বা ফুটো দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ধরণের দাঁড়িপাল্লা কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে জানতে চাওয়া হবে।
রাস্তায় যাওয়ার পথে পটলে রং করা আছে কি না, আলুর দাম কত, তাও জানতে চান তাঁরা। ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর দাম আগের থেকে কমতে শুরু করেছে। এরপরেই রানিগঞ্জ বাজারের গলি দিয়ে বিসি রোডে উঠে পড়েন তাঁরা।
রাস্তার দু’দিকে ফুটপাথের উপর সার দিয়ে ফলের দোকান। জেলাশাসকের চোখ পড়ে খোকন ব্যাপারীর দোকানে। আপেল তুলে প্রথমে নখ দিয়ে, পরে ছুরি দিয়ে চেঁছে দেখেন তিনি। তাতেই উঠে আসে মোমের আস্তরণ। একাধিক দোকানে দেখা যায় এই অবস্থা। জানা যায়, ওই আপেলগুলি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, আপেল চকচকে করতে মোমের আস্তরণ দেওয়া হয়।
ফল ব্যবসায়ী গোপাল সোনেকার, ত্রিভূবন শর্মারা বলেন, “আমরা আড়তদারদের কাছ কিনি। আমরা এ সম্বন্ধে কিছুই জানি না।” এক আড়তদার আবার বলেন, “কলকাতা থেকে প্যাকেট হয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা তা বিক্রি করি।” যদিও জবাবে যে সন্তোষজনক নয় তা বোঝা যায় দুই কর্তার মুখ দেখেই। জেলাশাসক বলেন, “আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ ও ওজনের নামে লোক ঠকানো হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু যা দেখলাম তা বেশ চিন্তার। অভিযান চলবে।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন বিমলেন্দু রায় বলেন, “আপেলের গায়ে সাধারণ ভাবে মোমের আস্তরণ থাকে। কিন্তু কৃত্রিম ভাবে মোম লাগানো আপেলের খোসা পেটে গেলে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। মোম হল পেট্রোল, কেরোসিনের মতোই হাইড্রো-কার্বন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy