Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অবৈধ দোকান বন্ধে অগ্রণী মহিলারাই

এই কারবার প্রতিরোধে সব থেকে অগ্রণী মহিলারা। মাস ছয়েক আগে অণ্ডালের শ্রীরামপুরের মহিলারা সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত পাহারা দিয়ে অবৈধ মদের কারবার বন্ধ করেছেন।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৮
Share: Save:

অবৈধ মদের কারবার আসানসোল মহকুমা জুড়ে। তা রুখতে কোথাও এগিয়ে আসছেন মহিলারা। কোথাও বা আবগারি দফতরের আরও বেশি পদক্ষেপ করা দরকার বলে মত নাগরিকদের। সেই সঙ্গে এই কারবার বন্ধে কেউ কেউ নাগরিক সচেতনতা তৈরির কথাও বলছেন।

এই কারবার প্রতিরোধে সব থেকে অগ্রণী মহিলারা। মাস ছয়েক আগে অণ্ডালের শ্রীরামপুরের মহিলারা সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত পাহারা দিয়ে অবৈধ মদের কারবার বন্ধ করেছেন। একই ভাবে, ২০১৭-র ২৭ জুন রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারি এলাকায় অন্তত ২০টি অবৈধ মদের দোকান ভেঙে দেন মহিলারা। চলতি বছরের জুলাইয়ে রানিগঞ্জের রঘুনাথচকে মহিলাদের লাগাতার আন্দোলনের জেরেই খানিকটা হলেও এই কারবারে লাগাম পড়ে। অভিযান চালায় পুলিশও। এ ছাড়া বল্লভপুরের রঘুনাথচক, অণ্ডালের শীতলপুর কোলিয়ারি লাগোয়া এলাকা-সহ বেশ কিছু জায়গায় একই ভাবে অবৈধ মদের দোকান ভেঙে দেন মহিলারা। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ইছাপুরেও মহিলারা অবৈধ দোকান ভাঙচুর চালান। কিন্তু দিন কয়েক পরে ফের সেই দোকানগুলি চালু হলে অণ্ডাল মোড়ে আবগারি দফতরে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

কিন্তু অবৈধ মদের রমরমা রুখতে কেন মহিলারাই অগ্রণী? অণ্ডালের চামেলি বাউরি, মহাবীর কোলিয়ারি এলাকার মিনি বাউরিরা বলেন, ‘‘এই কারবারের জেরে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন তো মহিলারাই। বাড়ির ছেলেদের মদের নেশার কারণে কষ্ট করে রোজগার করা টাকা উড়ে যাচ্ছে। সর্বস্ব হারাচ্ছে বহু পরিবার। এ ছাড়া নিত্য অশান্তি, তা-ও রয়েছে।’’

তবে, যাদের এই কারবার রোখার কথা, সেই আবগারি দফতর ও পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীর। জামুড়িয়ার কাজল বাউরি, অণ্ডালের তুফান মণ্ডলদের ক্ষোভ, আবগারি দফতর বা পুলিশ-প্রশাসন, কাউকেই মদের এই অবৈধ কারবার রুখতে সে ভাবে অভিযান চালাতে দেখা যায় না। এমনকি, কিছু দিন আগে রানিগঞ্জে আবগারি-অভিযান চলাকালীন এক দোকানির আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনার সময়েও একই অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী। তবে এই অভিযোগ স্বীকার করেনি পুলিশ ও আবগারি দফতর। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, “বিষয়টি আবগারি দফতরের দেখার কথা। পুলিশকে জানানো হলে আমরা পদক্ষেপ করি।’’ অন্য দিকে, আবগারি দফতরের জেলা সুপারিন্টেন্ডেন্ট তুহিন নাগের দাবি, ‘‘লাগাতার অভিযান চালানো হয়। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে খতিয়েও দেখা হয়।’’

শুধুমাত্র অভিযানে যে এমন কারবার বন্ধ হবে না, তা-ও মনে করছেন নাগরিকদের একাংশ। তাঁদের মতে, মদের নেশা রোখা সম্ভব সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে। কিছু দিন সংখ্যায় কম হলেও, তা-ও দেখা যাচ্ছে মহকুমায়। পুলিশ, প্রশাসন জানায়, এ বিষয়ে সচেতনতা প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। কয়েক মাস আগে রানিগঞ্জের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে নেশার বিরুদ্ধে মিছিলও করেছিল। এমন প্রচার, মিছিল বা সচেতনতা শিবিরের সংখ্যা আরও বাড়ুক, চাইছেন নাগরিকেরা। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তও বলেন, ‘‘মদ্যপানের ফলে সামাজিক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি মানসিক অবসাদ, লিভার সিরোসিস-সহ নানা ধরনের রোগও ঘটতে পারে। নার্ভের সমস্যা তৈরি হয়। মদ্যপান রুখতে জরুরি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Initiative Illegal Liquor Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE