Advertisement
E-Paper

উন্নত প্রযুক্তিতে উৎপাদন বৃদ্ধি, ভয় শুধু আন্দোলনে

এক দিকে খোলামুখ খনির সম্প্রসারণ। অন্য দিকে ভূগর্ভস্থ খনিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এই দুই পন্থায় সংস্থাকে দেশের সব চেয়ে বড় কয়লা উত্তোলক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএল।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৭
কাজ চলছে পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি প্রকল্পে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

কাজ চলছে পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি প্রকল্পে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

এক দিকে খোলামুখ খনির সম্প্রসারণ। অন্য দিকে ভূগর্ভস্থ খনিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এই দুই পন্থায় সংস্থাকে দেশের সব চেয়ে বড় কয়লা উত্তোলক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএল। সে জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে বিক্ষোভ-আন্দোলনে এই গতি যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, শ্রমিকদের সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করছেন ইসিএল কর্তাদের একাংশ।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবর্ষে ইসিএল লাভ করেছে প্রায় ১২৯৯ কোটি টাকা। পরপর ৬ বছর লাভের মুখ দেখায় সংস্থার দায়ের তুলনায় সম্পত্তি বেড়েছে। ফলে, সেটি বিআইএফআর থেকে বেরিয়েছে। কয়লা উত্তোলন ও পরিবহণের ক্ষেত্রেও রেকর্ড করেছে ইসিএল। এই সাফল্য ধরে রাখাটাই এখন সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংস্থার সিএমডি রাকেশ সিংহ। সংস্থার শ্রমিক-কর্মীদের তিনি জানিয়েছেন, পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারলে ইসিএলের উৎপাদন কোল ইন্ডিয়ার বেশ কয়েকটি সংস্থার ভূগর্ভস্থ খনির মোট উৎপাদনের থেকেও বেশি হবে।

কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করেছে ইসিএল, সে প্রশ্নে সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, একাধিক খোলামুখ ও ভূগর্ভস্থ খনিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। তিনি জানান, এ রাজ্যে দুর্গাপুর-ফরিদপুরের ঝাঁঝরা ও পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি এবং ঝাড়খণ্ডের রাজমহলএই তিনটি খনিকে এখন পাখির চোখ করা হয়েছে। চলতি বছরে এপ্রিল থেকে ভূগর্ভস্থ ঝাঁঝরা প্রকল্পে দ্বিতীয় ‘কন্টিনিউয়াস মাইনিং’ শুরু হয়েছে। আধুনিক এই উপায়ে কয়লা তোলা হয় সম্পূর্ণ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। একটি যন্ত্র প্রায় তিনশো জনের কাজ করতে পারে। খনির ছাদ ধরে রাখার কারিগরি কাজকর্ম এত দিন শ্রমিক-কর্মীরা করতেন। এখন সেই কাজও যন্ত্রের সাহায্যে করা হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ দিকে এই খনিতেই ‘পাওয়ার সাপোর্ট লঙওয়াল’ নামে একটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। নীলাদ্রিবাবু বলেন, “এই পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে পারলে এটি দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি কয়লা উৎপাদক ভূগর্ভস্থ খনি হবে।” তিনি আরও জানান, ঝাড়খণ্ডের রাজমহল ও পাণ্ডবেশ্বরে শোনপুর বাজারি খনির সম্প্রসারনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখানে ‘ফ্রি-স্টিয়ার্ড’ ও ‘মাল্টি ইউটিলিটি ভেহিকেল’ নামে দু’টি বিশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই দুই খনিতেই উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূগর্ভস্থ খনির তুলনায় খোলামুখ খনিতে লাভ বেশি হয়। কিন্তু, খোলামুখ খনির মূল সমস্যা জমি। নীলাদ্রিবাবু জানান, নতুন করে খোলামুখ খনি তৈরি বা পুরনোগুলিকে সম্প্রসারণের জন্য সরাসরি এলাকার জমিমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জমি কেনা হচ্ছে। নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে জমিদাতাদের। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি অসুরক্ষিত ও অলাভজনক ভূগর্ভস্থ খনিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, সেগুলিকে ভবিষ্যতে খোলামুখ খনিতে রূপান্তরিত করে সুরক্ষিত ও লাভজনক করা হবে। আবার যে সব অগভীর খোলামুখ খনি থেকে কয়লা তোলা হয়ে গিয়েছে, সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ কয়লা তোলা হবে।

ইসিএল কর্তাদের একাংশের দাবি, এত কিছুর পরেও সংস্থার উৎপাদনের গতি বাধা পাচ্ছে অনভিপ্রেত বিক্ষোভ-আন্দোলন কর্মসূচির জন্য। তা যে মোটেই এলাকার জন্য ভাল নয়, তা বুঝতে চাইছেন না অনেকেই। ওই কর্তাদের দাবি, এই খনি অঞ্চলের অর্থনীতি অনেকটা নির্ভর করে ইসিএলের পরিস্থিতির উপরে। তাই ইসিএলের ক্ষতি মানে এলাকারও ক্ষতি।

আইএনটিইউসি-র খনি শ্রমিকদের সাংগঠনিক সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “বিক্ষোভ-আন্দোলন এমন পর্যায়ে হওয়া উচিত নয় যাতে সংস্থার ক্ষতি হয়।” সিটু নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর আবার অভিযোগ, “ইদানীং শাসকপক্ষের দিক থেকে জঙ্গি আন্দোলনের জেরে সমস্যা হচ্ছে। বিরোধ থাকতেই পারে। তবে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে হবে।” আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত খনি শ্রমিক সংগঠনের নেতা হরেরাম সিংহের বক্তব্য, “ইসিএলের এই উন্নতিতে আমরা খুশি। তা জারি থাকুক। কোনও মতবিরোধের জেরে যাতে উৎপাদনে সমস্যা না হয়, সে দিকে আমরা নজর রাখি।”

new technology production ecl authority asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy