Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কাজ নেই, প্রচারও নেই তবু ভোট দেবে চিনাকুড়ি

টেনে-হিঁচড়েও সংসার আর চলছে না। নেতাদের পাশে দাঁড়ানো, আশ্বাস সবই ক্রমে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। বেতনহীন ২০ মাসের টানা লড়াইটা হয়তো এ বারই ভেঙে পড়বে। তবু ভোট দিতে যাবেন ওঁরা। ওঁরা কুলটির চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩২ জন শ্রমিক। তাঁরাই জানান, ২০ মেগাওয়াটের এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১৯৯১ সালে বানায় ইসিএল। পরে এটি চালানোর জন্য ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশনকে (ডিপিএসসি) ২০ বছরের লিজ দেয়। লিজের মেয়াদ শেষ হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

টেনে-হিঁচড়েও সংসার আর চলছে না। নেতাদের পাশে দাঁড়ানো, আশ্বাস সবই ক্রমে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। বেতনহীন ২০ মাসের টানা লড়াইটা হয়তো এ বারই ভেঙে পড়বে। তবু ভোট দিতে যাবেন ওঁরা।

ওঁরা কুলটির চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩২ জন শ্রমিক। তাঁরাই জানান, ২০ মেগাওয়াটের এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১৯৯১ সালে বানায় ইসিএল। পরে এটি চালানোর জন্য ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশনকে (ডিপিএসসি) ২০ বছরের লিজ দেয়। লিজের মেয়াদ শেষ হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। পরে আরও এক বছর সংস্থাটি চালায় ডিপিএসসি। তবে লিজের মেয়াদ বাড়ায়নি ইসিএল। ফলে ২০১২ সালের ১৬ অগস্ট কাজ গুটিয়ে নেয় ডিপিএসসি। সংস্থায় কর্মরত ১৪৭ শ্রমিক কর্মীর মধ্যে ৩২ জন বাদে সকলেই স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নেন। এই ৩২ জন দাবি তোলেন তাঁদের ডিপিএসসির অন্যান্য ইউনিটে বদলি করতে হবে। কিন্তু সংস্থা রাজি না হওয়ায় সেই থেকেই নিজেদের পাওনা-গন্ডা না নিয়ে অবস্থান ধর্ণা চালাচ্ছেন তাঁরা। ফকরুদ্দিন আনসারি নামে এক শ্রমিক বলেন, “আমার মেয়ে সদ্য একাদশ শ্রেণিতে উঠেছে। টাকার অভাবে ভর্তি করাতে পারছি না’’ আরেক কর্মী পরিমল নন্দী বলেন, “বিশ্বাস করুন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আর পারছি না।”

চিনাকুড়ি বাজার থেকে খুব বেশি হলে ৫০০মিটার দূরে অবস্থিত এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বাজারের ঠিক মাঝখানেই কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নিজস্ব দলীয় অফিস। অফিসের দোতলা থেকে স্পষ্ট দেখা যায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে। এক সময় এখানকার শ্রমিক কর্মীদের নিয়েই দলের একচ্ছত্র শ্রমিক সংগঠন গড়েছিলেন উজ্জ্বলবাবু। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, একসময় দলের মিছিল-মিটিং-আন্দোলন সবেতেই নিয়ে যেতেন তাঁদের।

সংস্থাটির কাছে গিয়ে দেখা গেল, বন্ধ গেটের পাশে ত্রিপলের ছাউনি খাটিয়ে জনা কয়েক শ্রমিক কর্মী ধর্নায় বসেছেন। ছাউনির দু’পাশে ঝুলছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধুলো মলিন কাট-আউট। কথা বলেই জানা গেল, স্বেচ্ছাবসর না নেওয়া ওই ৩২জন শ্রমিক গত ২০ মাস ধরে এ ভাবেই ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সংস্থার আইএনটিটিইউসি সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “আর পারছি না জানেন। এ বার মনে হচ্ছে ভেঙে পড়ব।” তিনিই জানান, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরাও এ বার স্বেচ্ছাবসর দিয়ে দেবেন।

২০ মাস আগে সংস্থা বন্ধ হওয়ার পরে এখন রয়েছে কঙ্কালসার ছাউনি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে চিমনিগুলো। ধোঁয়া নেই। বাতাসে কয়লার গুঁড়োও নেই। ঠিক যেন তুলিতে আঁকা শহুরে ল্যান্ডস্কেপ। এমনকী কারখানার আবাসন এলাকায় গেলে বোঝার উপায় নেই দেশের সর্বোচ্চ নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। তুঙ্গে উঠেছে দিল্লি দখলের লড়াই। কোথাও কোনও পোস্টার নেই, দেওয়াল লিখন নেই। রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের আনাগোনওা নেই। আবাসনের বাসিন্দারা জানান, কোনও দলের প্রার্থীই ভোট চাইতে আসেননি। শুনতে আসেননি তাঁদের দুর্দশার কথা। অথচ এক সময় তাঁদের নিয়েই কত মাথা ব্যথা ছিল সকলের। তবে এ বারও ভোটটা দিতে যাবেন তাঁরা। শ্রমিক ভাস্কর ঘোষ বলেন, “আমাদের জন্য কেউ ভাবল না জানেন। তবু ভোট দিতে যাব।” আরেক জন বিধান মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভোট তো দিতেই হবে। আমাদের যে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।” সত্যিই তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কী না তা পরের কথা। তবে এলাকার বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় তাঁদের লড়াইটা দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chinakuri dpsc sushanta banik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE