এই নির্মাণকে কেন্দ্র করেই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
জমি দখল করে অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র নির্মাণের অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠালেন তিন জমির মালিক। অন্যদিকে জমির দাম না দিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাস্তা নির্মাণ পরিকল্পনা মাঝপথে আটকে দিয়েছেন তৃণমূলেরই নেতৃত্বে জমির মালিকরাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উখড়ার দাস পাড়ায় চলতি বছরের প্রথম দিকে পঞ্চায়েত সমিতি একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। সেই মতো নকশা তৈরি করে জমি ঘেরার কাজ শুরু হতেই তিন জন জমির মালিক নারায়ণচন্দ্র রায়, কালাচাঁদ সিংহ ও নারায়ণ দাঁ আপত্তি জানান। অভিযোগ, তাঁদের কোনও গুরুত্ব না দিয়ে সমিতি নির্মাণ কাজ শুরু করে। নারায়ণচন্দ্রবাবুরা জানান, উখড়া মৌজার দাসপাড়ায় ১৮২-৪০৪৫ দাগ নম্বরের এক একর ২১ শতক জমি আছে। জমির তিন অংশীদারের মধ্যে তিনি নিজে সাড়ে দশ কাঠার মালিক। নির্মাণ কাজ শুরু করার সময় পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির কেউ জমির নথিপত্রের গুরুত্ব দিচ্ছেন না দেখে, তাঁরা চলতি বছরের ১২ মার্চ বাধ্য হয়ে দুর্গাপুর আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত সাত মার্চ পর্যন্ত ওই জমিতে যে কোনও ধরণের নির্মাণ কাজের উপর স্থগিতাদেশ জারী করে। নারায়ণচন্দ্রবাবু বলেন, “তাতেও কোনও প্রতিকার মেলেনি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমিতি ওই নির্মিয়মান কক্ষের ছাদ পর্যন্ত ঢালাই করে দেয়। শুধু জানলা দরজা লাগানো বাকি আছে। আদালতের নির্দেশ কার্যকরী করতে সমিতি থেকে পুলিশ প্রশাসন কেউ সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ না করলে বাধ্য হয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে প্রতিকারের আবেদন জানিয়েছি।”
সেই চিঠির অনুলিপি বিডিও, জেলাশাসক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সকলের কাছে পাঠিয়েছেন জমির মালিকরা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কালোবরণ মণ্ডল বলেন, “ওই জমির নকশা আমরা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছে পাঠিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে জানতে পেরেছি ওই একই দাগ নম্বরে ওদের তিন জনের জমি থাকলেও যেখানে নির্মাণ হয়েছে সেটি খাস জমি।” সভাপতির এই বক্তব্যে নারায়ণচন্দ্রবাবুদের পাল্টা দাবি, “যদি তাই হয় তা হলে, আদালতে মামলা শেষ হওয়ার পরেই করতে পারতেন। আদালতেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।”
অন্য দিকে,উখড়াগ্রাম পঞ্চায়েতের চাষাপাড়ার সীমানা থেকে আমলোকা পর্যন্ত একটি নতুন রাস্তা তৈরি আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের উখড়া অঞ্চল কমিটির সহ সভাপতি জয়রাজ ঘটক ও জমির মালিকদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দা দেবানী বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দন ঘোষ, রাধেশ্যাম মণ্ডল, কৈলাশ মণ্ডলরা জানান, কোনও অনুমতি না নিয়েই তাঁদের মতো প্রায় দশ জনের জমির উপর দিয়ে একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বেঙ্গল এরাট্রোপলিশ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানতে পারেন পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা করেই এ কাজ হচ্ছে। তাঁদের দাবি, “রাস্তায় আপত্তি নেই। তবে জমির দাম মিটিয়ে দিতে হবে।” কৈলাসবাবু বলেন, “এই আর্জি তৃণমূলের উখড়া অঞ্চল কমিটির সভাপতি জয়রাজ ঘটককে জানিয়েছি।”
জয়রাজবাবু বলেন, “রাস্তায় মাটি ফেলার কাজ প্রায় সত্তর শতাংশ শেষ হওয়ার পর ওরা আমার কাছে আসে। আমি তারপর ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকর্মীদের কাছ থেকেই জানতে পারি জমির দাম না দেওয়ার সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই কাজ করছেন। নির্মাণ কর্মীদের জমি নিয়ে সমস্যা না মেটা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করলে ওরা ফিরে যায়।” সম্প্রতি উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জমি মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন। সেখানেও তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, জমির দাম না পেলে তাঁরা রাস্তা নির্মাণ করতে দেবেন না।
উখড়া পঞ্চায়েতের প্রধান আশিস কর্মকার বলেন, “জমি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy