জলের জন্য লাইন কুলটির নিত্যচিত্র।
ইস্পাত ও খনি শিল্প এলাকায় সমৃদ্ধি লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে কলেবরে বেড়েছে কুলটি শহর। কিন্তু, বাড়তে থাকা একটি জনপদে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি যতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, তা দেখা হয়নি বলে খেদ রয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের। পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি। আশপাশে নানা পর্যটনস্থান থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ও রাস্তার কোনও উন্নয়ন হয়নি। এ ছাড়াও রয়ে গিয়েছে পরিষেবা সংক্রান্ত আরও নানা সমস্যা।
কুলটি বিধানসভা এলাকার এক দিকে রয়েছে ইস্কো। অন্য দিকে ইসিএল এবং বিসিসিএলের নানা খনি। এই তিন সংস্থার কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মী পরিবার নিয়ে বাস করেন কুলটিতে। এই সব সংস্থার আবাসন কলোনি রয়েছে। সময়ের সঙ্গে শহরে নানা অফিস-কাছারিও তৈরি হয়েছে। কর্মসূত্রে বাইরে থেকে এসে এই শহরেই বাড়ি তৈরি করে থেকে গিয়েছেন অনেকে। সংস্থার সামাজিক দায়িত্বপালন প্রকল্পে ইস্কো, ইসিএল এবং বিসিসিএল নানা এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ, রাস্তা তৈরি, নিকাশি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা ইত্যাদি করে থাকে। কিন্তু শহরের জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় শুধু সেই পরিষেবায় চাহিদা মেটে না।
কুলটিতে মূল সমস্যা হল পানীয় জলের। ইস্কো, ইসিএল যে জল দেয় তা পর্যাপ্ত নয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সরবরাহ করা জলেও চাহিদা পুরোপুরি মেটে না। জল না পৌঁছনোর অভিযোগে মাঝে-মধ্যেই বিক্ষোভ-অবরোধ হয় নানা এলাকায়। দূরের এলাকা থেকে জল বয়ে আনতে হয় বাসিন্দাদের। ২০০৬ সালে কুলটির জন্য একটি জলপ্রকল্প অনুমোদন করে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। ঠিক হয় প্রকল্পটি তৈরি করবে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। তত্কালীন বাম পরিচালিত এডিডিএ-র বোর্ড সেই প্রকল্প তৈরিতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু, বাধ সাধে তৃণমূল পরিচালিত তত্কালীন কুলটি পুরবোর্ড। বিষয়টি মীমাংসার জন্য আদালতে গেলে জলপ্রকল্প গড়া থমকে থাকে। সেই প্রকল্প আর গড়ে ওঠেনি। ফলে, এলাকার মানুষের জল নিয়ে দুর্দশাও ঘোচেনি। শহরের বাসিন্দা শ্যামাপদ চট্টরাজ বলেন, “রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিক স্বার্থের কথা ভেবে জল প্রকল্পটি তৈরি করতে পারলে লাভবান হতেন এলাকার মানুষ।” শুধু জল নয়, কুলটির নিকাশি সমস্যা নিয়েও নাগরিকদের অভিযোগ বিস্তর। এলাকা ঘুরলেই দেখা যায়, যত্রতত্র আবর্জনা স্তুপ। তবে শহরবাসী জানাচ্ছেন, ইদানীং আবর্জনা পরিষ্কারের বিষয়টি আগের তুলনায় ভাল হয়েছে।
কুলটি শহর ঘিরে বরাকর ও নিয়ামতপুরে গড়ে উঠেছে বড় বাজার এলাকা। খুচরো ও পাইকারি, দুই বাজারের চাহিদা শুধু এই এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও ক্রেতারা নিয়মিত আসেন। কিন্তু, শহরের বেহাল রাস্তা ও প্রবল যানজট সমস্যায় এখানকার ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। বরাকর স্টেশন রোড, বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া জিটি রোড ও নিয়ামতপুরে যানজট নিত্য ঘটনা। বরাকরের ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণ ভড় বলেন, “এলাকার অর্থনীতির স্বার্থেই এখানকার রাস্তা সংস্কার করা ও যানজটের সমস্যা মেটানো উচিত।” কুলটির আর একটি বড় সমস্যা হল কেরোসিন তেল ব্যবহার করে যাতায়াতকারী যানবাহন। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, পাশ্ববর্তী রাজ্য থেকে প্রচুর এই ধরনের অটো যাতায়াত করে কুলটিতে। ফলে, শহরে দূষণ ছড়ায়। অতিষ্ঠ অবস্থা হয় এলাকাবাসীর।
কুলটি শহর ঘিরে রয়েছে নানা পর্যটনস্থান। বরাকরের বহু পুরনো সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, কল্যাণেশ্বরী মন্দির, মাইথন, ডিসেরগড়ে দামোদরের পাড়ে ছিন্নমস্তা মন্দির দেখতে সারা বছরই বহু মানুষজনের আনাগোনা হয়। সেগুলিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবি নানা সময়ে প্রশাসনকে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। প্রশাসন উদ্যোগী হলে পর্যটনের হাত ধরেও এলাকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে, বিশ্বাস করেন কুলটির মানুষ।
ছবি: শৈলেন সরকার।
(শেষ)
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-আসানসোল-দুর্গাপুর’।
অথবা চিঠি পাঠান
‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy