Advertisement
E-Paper

দুই এসআইয়ের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

টানা তিনবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় বর্ধমান জেলা পুলিশের দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেন কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক পরেশচন্দ্র সরকার। প্রায় দু’মাস পরে বুধবার থেকে কেতুগ্রাম ধর্ষণ মামলার এই পর্বের শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১০

টানা তিনবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় বর্ধমান জেলা পুলিশের দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেন কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক পরেশচন্দ্র সরকার।

প্রায় দু’মাস পরে বুধবার থেকে কেতুগ্রাম ধর্ষণ মামলার এই পর্বের শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথমদিনেই কেতুগ্রাম ধর্ষণ মামলার গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী আদালতে না আসায় দু’পক্ষের আইনজীবীরাই বিচারকের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বিচারককে জানান, ওই দুই এসআই রাজীব ভট্টাচার্য ও স্বপন হাজরা বারবার সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলাটি ব্যহত হচ্ছে। পরে বিকেলে ওই দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।

কেতুগ্রাম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ধর্ষণ ও ডাকাতির মামলা একত্র হওয়ার পরে কেতুগ্রাম থানার ওই দুই অফিসার ধৃতদের কাছ থেকে মোবাইল-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেন। সাক্ষ্য চলার সময়ে বেশ কয়েকজন সাক্ষী এজলাসে দাঁড়িয়ে মোবাইল, ট্রেনের টিকিট, অভিযোগকারিণীর বেশ কিছু জিনিস সনাক্তও করেন। এ বার ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় বাজেয়াপ্ত করা জিনিসগুলি বিচারকের সামনে শনাক্ত করার কথা ছিল রাজীব ভট্টাচার্য ও স্বপন হাজরার। কিন্তু এ দিন ‘আইন-শৃঙ্খলা’ জনিত সমস্যার কারণে আদালতে আসতে পারবেন না বলে জানান তাঁরা। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে স্বপন হাজরা বর্ধমান থানায় এবং রাজীব ভট্টাচার্য মন্তেশ্বর থানায় রয়েছেন।

২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কাটোয়া-আমোদপুর ন্যারোগেজ লাইনের ট্রেনে মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিধবা মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। অন্য সাক্ষীরা আদালতকে জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করার উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ট্রেনে ওঠে। গার্ডের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পাঁচুন্দি ও গোমাই স্টেশনের মাঝে ট্রেন দাঁড় করায় দুষ্কৃতীরা। তখনই ওই মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে রেললাইনের পাশে ঝোপে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরে অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়ে অভিযুক্তদের জেলে ও আদালতে শনাক্ত করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। চার জন জেল হেফাজতে রয়েছেন। একজন জামিনে ছাড়া রয়েছেন, আর এক অভিযুক্ত কায়েশ শেখ এখনও অধরা। মা-মেয়ে ছাড়াও ওই ট্রেনের গার্ড, চালক, সহকারী চালক, স্থানীয় তৃণমূল নেতা, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের দুই চিকিত্‌সক, অভিযোগকারিণীর ভাসুর, ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির সহ-অধিকর্তা শিপ্রা রায়-সহ কয়েকজন যাত্রী ইতিমধ্যেই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের পরেশচন্দ্র সরকারের এজলাসে হাজির হয়ে যান সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় ও অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলার সাক্ষ্য চলাকালীন এই দুই আইনজীবী বিচারকের সামনে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এ দিন দুই এসআইয়ের না আসা নিয়ে দু’জনের গলাতেই ক্ষোভ ছিল স্পষ্ট। পরে কাঞ্চনবাবু বিচারকের কাছে লিখিত ভাবে জানান, ওই দুই সাক্ষী ‘আইন শৃঙ্খলা’র অজুহাত দেখিয়ে বারবার আদালতে আসছেন না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি ব্যহত হচ্ছে। তিনি আবেদন করেন, ওই দুই সাক্ষীর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করুক। ধীরেন্দ্রনাথবাবু আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ওই দুই অফিসারই খুব গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হোক, মামলার এই পর্বেই যেন তাঁরা আদালতে সাক্ষী দেন। প্রসঙ্গত, গত ১৩ অগস্ট ও ৮ সেপ্টেম্বর স্বপন হাজরার এবং ১৪ অগস্ট ও ৯ সেপ্টেম্বর রাজীব ভট্টাচার্যর সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ঠিক হয়েছিল।

পরে ওই দুই এসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন বলেন, “থানা থেকে আমদের না ছাড়লে কী করার আছে!” কিন্তু আদালতের সমন পাওয়ার পরেও সাক্ষ্য দিতে অফিসারদের ছাড়া হচ্ছে না কেন? জেলা পুলিশের এক কর্তার উত্তর, “থানাগুলিতে এসআইয়ের সংখ্যা খুবই কম। সে জন্য ওসিরা অফিসারদের সহজে ছাড়তে চান না।”

katwa rape case si warrant issued fast track court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy