Advertisement
E-Paper

দিল্লি থেকে উড়ে এসেই আব্বার শহরে মমতাজ

আমার বাপের বাড়ি বর্ধমানের পার্কার্স রোডে। বক্তার নাম মমতাজ সংঘমিতা। নামজাদা চিকিত্‌সক। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরীর স্ত্রী। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০০:২৩
বর্ধমানে মমতাজ সংঘমিতা। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ।

বর্ধমানে মমতাজ সংঘমিতা। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ।

আমার বাপের বাড়ি বর্ধমানের পার্কার্স রোডে।

বক্তার নাম মমতাজ সংঘমিতা। নামজাদা চিকিত্‌সক। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরীর স্ত্রী। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী।

বুধবার প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হতেই স্ত্রীকে বারবার ফোন করতে শুরু করেছিলেন নুরে আলম। কিন্তু মমতাজ তখন দিল্লিতে। হাপুরে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার আক্রান্ত ১৬ বছরের রশিদা খাতুনের অস্ত্রোপচার চলছে। তিনি ফোনই বা ধরেন কী করে, আর কলকাতায় উড়ে আসেনই বা কী করে?

শেষমেশ বৃহস্পতিবার রাতে এসে নামেন দমদমে। শুক্রবার সোজা বর্ধমানে এসে প্রচার শুরু।

তিক্ত প্রসঙ্গটা উঠেছিল গোড়াতেই আপনি তো বহিরাগত! ঝটিতি জবাব আসে, “কে বলল! আমার বাপের বাড়ি পার্কার্স রোডে।” বটেই তো। সিপিএমের ডাকসাইটে নেতা তথা বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার মনসুর হবিবুল্লাহর মেয়ে মমতাজ। ১৯৪৬ সালের ১৬ জানুয়ারি পার্কার্স রোডের যে বাড়িতে মমতাজের জন্ম, সেটি ভেঙেচুরেই তৈরি হয়েছে সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির দফতর। তাঁকে না জানিয়ে তাঁর সম্পত্তির অংশ ঘিরে ফেলায় দীর্ঘদিন আগেই সিপিএমের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন মমতাজ। তার শুনানি চলছে নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে।

“আমি বর্ধমানে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছিলাম। তার পরে অবশ্য বাকি পড়াশোনা কলকাতায়। সরকারি কাজ থেকে অবসর নিয়ে এখন দিল্লির এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি” এক নিঃশ্বাসে জানিয়ে দেন জোঁড়াসাঁকোর ২৬ রতু সরকার লেনের বাসিন্দা মমতাজ। বলেন, “সেই বাড়িটা আজ আর নেই, ঠিক কথা। কিন্তু আমি বারবার এখানে এসে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করেছি। এখানে আমার থাকবার জায়গাও আছে এখনও।” পিছন থেকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ধুয়ো ধরেন, “বর্ধমানের ঘরে-ঘরে ওঁর ঘর।”

ঘটনাচক্রে, ১৯৮৭ সালে নাদনঘাট কেন্দ্রে হবিবুল্লাহর বিরুদ্ধেই জীবনের প্রথম বিধানসভা নির্বাচন লড়তে নেমেছিলেন সে দিনকার কংগ্রেস প্রার্থী স্বপনবাবু। প্রায় ১৭ হাজার ভোটে হারেন। আর এখন মূলত তাঁর ঘাড়েই হবিবুল্লাহর মেয়েকে জেতানোর দায়িত্ব। হাসিমুখে স্বপনবাবু অবশ্য বলেন, “হবিবুল্লাহ মানুষ হিসেবে ছিলেন চমত্‌কার। জেলার মানুষ তাঁকে মনেও রেখেছেন। তাঁর মেয়ে আমাদের হয়ে দাঁড়ানোয় সুবিধাই হয়েছে।”

আব্বার দলের বিরুদ্ধে লড়তে নেমে প্রচারে আব্বার কথা বলবেন?

মমতাজ মুখ খোলার আগেই পাশ থেকে খেই ধরে নেন নুরে আলম “পার্কার্স রোডের ওই বাড়ি বামপন্থী আন্দোলন ছাড়াও তিনটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। খিলাফত আন্দোলন ওখানে দানা বেঁধেছিল। কংগ্রেসের নানা আন্দোলনের শুরু ওখানে। মুসলিম লিগের জন্মের পিছনেও ওই বাড়ির মদত ছিল। মনসুর হবিবুল্লাহ কি একা সিপিএমের?” মমতাজ সায় দেন, “আব্বা মানুষ হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত বড় মাপের। দলমত নির্বিশেষে মানুষের জন্য কাজ করতেন। তাঁর কথা না বললে আমার উত্তরাধিকারের কথা অস্পূর্ণ থাকবে।”

বর্ধমানের ঘোড়দৌড় চটির তৃণমূল অফিসে দলের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন মমতাজ। স্বপনবাবু তো বটেই, মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেক ছোট-বড় নেতাই হাজির ছিলেন। প্রচার নিয়ে কী পরিকল্পনা? মমতাজ বলেন, “প্রচার কোন পথে হবে, কী কথা বলব মানুষকে, তা এখনও জানি না। তবে একটাই কথা জানি, আমি জিতছিই। আসলে প্রার্থী হিসেবে আমার নাম থাকলেও, আসল প্রার্থী তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!”

দুপুর ১২টা নাগাদ কর্মীদের সঙ্গে কয়েক কদম মিছিলে হেঁটেই গাড়িতে উঠে পড়েন চৌধুরী দম্পতি। ধুলো উড়িয়ে গাড়ি ছোটে কলকাতা।

loksabha election 2014 tmc candidate mumtaj sanghamita nure alam choudhury burdwan rana sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy