Advertisement
E-Paper

পাঁচতলায় আগুন লাগলেই নিধিরাম দমকল

দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে ওঠে গেল গেল রব। বৈঠক, পর্যালোচনা, প্রস্তাবযাবতীয় উদ্যোগ শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দিন পেরোতে না পেরোতেই ফের এক হাল। শহরে একের পর এক বহুতল গড়ে উঠলেও সেখানে দমকলের উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাই, কোনও বহুতলে আগুন লাগলে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বা কেউ আটকে পড়লে কী করে উদ্ধার করা যাবে, তা ভেবে দুশ্চিন্তায় দুর্গাপুরের দমকলের কর্মীরা।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
বাঁ দিকে, এই সব বহুতলে ওঠার সিঁড়িই নেই দমকলের। ডান দিকে, দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়ে আধুনিক ইঞ্জিন। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

বাঁ দিকে, এই সব বহুতলে ওঠার সিঁড়িই নেই দমকলের। ডান দিকে, দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়ে আধুনিক ইঞ্জিন। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে ওঠে গেল গেল রব। বৈঠক, পর্যালোচনা, প্রস্তাবযাবতীয় উদ্যোগ শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দিন পেরোতে না পেরোতেই ফের এক হাল। শহরে একের পর এক বহুতল গড়ে উঠলেও সেখানে দমকলের উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাই, কোনও বহুতলে আগুন লাগলে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বা কেউ আটকে পড়লে কী করে উদ্ধার করা যাবে, তা ভেবে দুশ্চিন্তায় দুর্গাপুরের দমকলের কর্মীরা।

এক সময়ে দুর্গাপুর শহরে বহুতল বলতে বাসিন্দারা বুঝতেন সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট কলোনির সাত তলা আবাসনটি। কিন্তু গত কয়েক বছরে শহরের চেহারা বদলে গিয়েছে। পুরসভা এলাকা তো বটেই, লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকাতেও গড়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। এখন শহরে ১৪ তলার আবাসনও রয়েছে। অথচ, দমকলের হাতে যে মই আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ চার তলা পর্যন্ত পৌঁছনো যেতে পারে। যে ইঞ্জিন আছে তা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ তলা পর্যন্ত জল পৌঁছতে পারে। রাখার জায়গার অভাব, তাই নেই অতি প্রয়োজনীয় ৩০ মিটারের হাইড্রোলিক মই নেই। এমনকী, কর্মী সংখ্যাও যা থাকার কথা রয়েছে, তার অর্ধেক। কাজেই, এক বার কোনও বহুতলে আগুন লাগলেই দমকলের মান্ধাতা আমলের পরিকাঠামো বেআব্রু হয়ে যাবে বলে মনে করছেন দমকলের এক আধিকারিক। মঙ্গলবার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশানালে অগ্নিকাণ্ড দেখে দুর্গাপুরের বহুতলের বাসিন্দা পল্লব বসু, স্মৃতিকণা মুখোপাধ্যায়রা বলছেন, “কী হতে পারে তা ভেবে হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে!”

শহরের লেবারহাটে দমকলের দফতর গড়ে ওঠে পঞ্চাশের দশকে। যোগাযোগের সুবিধার জন্য ১৯৮৩ সালে দমকল উঠে আসে সিটি সেন্টারে। এখন ৫টি ইঞ্জিন আছে। তার মধ্যে একটি ১২ হাজার লিটার, একটি ৯ হাজার, দু’টি সাড়ে তিন হাজার এবং একটি এক হাজার লিটার জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। সব থেকে আধুনিক ইঞ্জিনটি ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বুদবুদ সেনা ছাউনির বিস্ফোরণের আগুন নেভাতে গিয়ে লরির সঙ্গে সর্ংঘষে পড়ে। সেটি আর চালু করা যায়নি। দ্রুতগামী এই ইঞ্জিনে জল এবং ফোমের ট্যাঙ্কদু’রকমই ছিল। প্রায় তিন তলা উঁচু বাড়িতে পৌঁছনোর মই ছিল। তার বদলে যে ইঞ্জিন দেওয়া হয়, সেটি অত আধুনিক নয় বলে জানান দমকলের এক আধিকারিক।

দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদানীং গড়ে ওঠা উঁচু শপিংমল, হাসপাতাল এবং কিছু বহুতলে ‘স্প্রিংলার’ লাগানো আছে। মাটির নিচে রয়েছে বড় জলাধার। বাড়ির সব তলায় জলভর্তি পাইপলাইন। কোনও অংশের গড় তাপমাত্রা ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালেই পাইপ ফেটে দ্রুত জল বেরিয়ে আসবে। নিভে যাবে আগুন। তা ছাড়া ওই সব বাড়িতে স্মোক, ফ্লেম বা হিট ডিটেক্টর আছে। কিন্তু, অধিকাংশ বহুতলেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কিছু নেই বলে অভিযোগ। সেগুলি নির্মাণের আগে অগ্নি নির্বাপণের পরিকল্পনা দেখিয়ে দমকলের কাছ থেকে প্রাথমিক শংসাপত্র নিয়ে কাজ শুরু করেন নির্মাতারা। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরে চূড়ান্ত শংসাপত্রের জন্য তাঁরা আবেদন করেন। দমকলের বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক তুষারকান্তি সেন বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী চার তলার বেশি উঁচু বাড়িতে মাটির নীচে এবং বাড়ির মাথায় জলাধার থাকা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া প্রতি তলে অগ্নি নির্বাপক সামগ্রী থাকতে হবে। তবেই দমকল থেকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র মেলে।” খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, প্রায় শ’খানেক বহুতল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগেই মানুষজন থাকতে শুরু করেছেন। কিন্তু, নির্মাতাদের তরফে চূড়ান্ত শংসাপত্রের জন্য আবেদন করার আগ্রহ চোখে পড়ছে না। এক বহুতল নির্মাতা বলেন, “সম্পূর্ণ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা বেশ সময় ও খরচসাপেক্ষ। ধাপে ধাপে তা গড়া হচ্ছে। কিন্তু, তত দিন গ্রাহককে আবাসন হস্তান্তর না করলে আমরা বিপাকে পড়ে যাব।”

দমকল আধিকারিক তুষারকান্তিবাবু জানান, পানাগড় থেকে আসানসোল পর্যন্ত মোট ১১টি ইঞ্জিন রয়েছে। তার বাইরে অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থারও ইঞ্জিন আছে। কাজেই, বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ইঞ্জিনের অভাব হবে না। কিন্তু ছ’সাত তলার বেশি উঁচু বাড়িতে কী ভাবে জল বা মই পৌঁছনো যাবে তা নিয়েই সমস্যা। তিনি জানান, ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু বাড়ির অনুমতি দুর্গাপুরের দফতর থেকে দেওয়া হয়। তার বেশি উঁচু বাড়ির অনুমতি নিয়ে হয় কলকাতার সদর দফতর থেকে। তুষারকান্তিবাবু বলেন, “হাইড্রোলিক মই কলকাতার বাইরে কোথাও নেই। আমাদের যা পরিকাঠামো আছে তা দিয়ে ৬-৭ তলা উঁচু বাড়ির আগুন নেভানো সম্ভব। কিন্তু তার উপরে ঘটলে কী হবে, বলা মুশকিল। সেক্ষেত্রে ওই সব বহুতলের নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাই একমাত্র ভরসা।”

durgapur subrata shit firing incident fire engines
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy