সলতেটা পাকানোই হচ্ছিল।
মাস তিনেক আগে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আপেল শেখ খুন হন কোমরপুর-হাটতলায়। মার্চে মাজিনা গ্রামে বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক জনের। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হন আর এক জন। চরসুজাপুরেও খুনের ঘটনা ঘটে। কাঁটারিতে তরুণী খুন ২০১৩ সালে আসমিরা বিবি, সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য খুন হন।
এ বার পারিবারিক বিবাদ চলে এল রাজনীতির ময়দানে। তৃণমূলের মদতে পুষ্ট দু’দল দুষ্কৃতীর সংঘর্ষে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ল, পু়ড়ল ১০-১২টা বাড়ি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হল। বোমায় হাত উড়ল স্থানীয় তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত বজাই শেখের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বজাই গোষ্ঠীর লোকেরা কিছু দিন আগে তৃণমূলে যোগ দেয়। আফরোজ ও বজাইয়ের পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তাও রয়েছে। সম্প্রতি বধৃ নির্যাতনের মামলায় বজাই শেখের বাড়ির দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। জেলও হয় তাঁদের। অভিযোগ, মহরমের সময়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা, বোমাবাজি হয়। অভিযোগ, বজাই শেখদের দাপটে আফরোজের দলবল গ্রামছাড়া হয় তখন।
পরে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও কেতুগ্রাম থানার আলোচনায় ঠিক হয়, সোমবার পুলিশ ক্যাম্প বসবে এলাকায়। তারপরে ঘরছাড়াদের গ্রামে ঢোকানো হবে। মঙ্গলবার সেই মতো আফরোজেরা গ্রামে ঢোকার প্রস্তুতি নেয়। তাদের সঙ্গে গ্রাম লাগোয়া মুর্শিদাবাদের দুষ্কৃতীরাও ছিল। গ্রামে ঢোকার সময়ে তারা বোমাবাজি করে। বজাই-গোষ্ঠীর অভিযোগ, বোমাবাজি থামানোর আর্জি নিয়ে ক্যাম্পে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ক্যাম্প ছেড়ে পুলিশ চলে গিয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে হলে ফিরে আসে পুলিশ। ক্ষুব্ধ মহিলাদের একটা বড় অংশ ঘণ্টাখানেক ধরে পুলিশকে শিকল দিয়ে আটকে রাখে। তখন বজাইয়ের দলবল আফরোজের বাড়ি-সহ গ্রামের একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরায়, ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ কেতুগ্রাম থেকে তিন গাড়ি পুলিশ আসে। মহিলারা পুলিশের রাস্তা ফের আটকে দেন। পুলিশকে লক্ষ্ করে ঢিল ছোড়া হয়, ধস্তাধস্তি হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ জানায়, লালিপাড়ায় ঢুকে দেখা যায় একাধিক বাড়িতে আগুন জ্বলছে। মোসলেম নামে এক জনের বাড়ি থেকে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনতে। বাড়ির কাছে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে শিকল তোলা। ধোঁয়ায় ভর্তি চারপাশ। পুলিশ দরজা খুলে ঢুকে দেখে, সিঁড়ির তলায় দুই ছয় ও আট বছরের দু’টি ছেলেমেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। তাদের উদ্ধার করা হয়। বাড়িতে আরও দু’চার জন মহিলাও আটকে ছিলেন। তাঁরা পুলিশকে জানান, দুষ্কৃতীরা বাড়ি ভাঙচুরের পরে দরজায় শিকল তুলে চলে যায়। আটকে পড়েন তাঁরা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিরুরি গ্রামের রাস্তায় কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে অসংখ্য বোমার দাগ। একের পর এক বাড়িতে আগুন জ্বলছে। দমকলের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। সিপিএম অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূলের পাশাপাশি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেও দায়ী করছে। তবে পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, তিন জেলার করিডর হওয়ায় দুষ্কৃতীদের যাতায়াত এই জায়গায় খুব বেশি। থানার নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ নেই। কেতুগ্রাম ১-এর তিন জায়গা ছাড়াও কেতুগ্রাম ২ ব্লকের একটা বড় অংশ নদিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ফলে সহজেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা প্রাথমিক ভাবে পারিবারিক দ্বন্দ্বের ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। কী কারণে দুই পরিবারের গোলমালে গ্রাম জড়িয়ে গেল, কেনই বা বোমা ছোড়া হল, আগুন লাগানো হল, দেখছি। কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।’’