ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব, জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো মুচলেকায় এমনই দাবি করেছেন বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। গত ১২ মার্চ মঙ্গলকোটের একটি সভায় বিরোধীদের ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে গর্তে চাপা দেওয়া ও কীটনাশক দিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তারপরেই মঙ্গলকোট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য ও জন প্রতিনিধিত্বমূলক আইনের ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, মামলার খবর পেয়ে অনুব্রতবাবু সাত দিন আগে মঙ্গলকোট থানায় একটি মুচলেকা পাঠিয়ে দাবি করেন, সে দিন ওই কথা তিনি বলেননি। তবে এরপর থেকে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই মুচলেকা প্রসঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসা করা হলে, প্রসঙ্গ শুনেই তিনি ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করলে তাঁর এক অনুগামী বলেন, “দাদা এইমাত্র একটি সভায় ঢুকেছেন পরে ফোন করুন।” পরেও ব্যস্ততার অজুহাতে অনুব্রতবাবু ফোন ধরেননি।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেই আমরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যে সব জায়গায় বিভিন্ন দলের নেতারা নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তালিকায় রয়েছেন সিপিএমের এক নেত্রী ও তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল-সহ পাঁচ নেতা। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
ওই তালিকায় বিষ্ণুপুরের সিপিএম প্রার্থী সুস্মিতা বাউড়ি, তৃণমূলের পূর্বস্থলী পূর্বের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, দলের মন্তেশ্বর ব্লক সভাপতি সজল পাঁজা ও অনুব্রতবাবুর মঙ্গলকোটের ১২ মার্চের সভার আহ্বায়ক, ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর নাম রয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুস্মিতা বাউরি সম্প্রতি ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গলসি বিধানসভার বুকে একটি সশস্ত্র মিছিল বের করেন। তারপরেই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করে। বুধবার ওই মামলায় জামিন পেয়েছেন সুস্মিতা দেবী।
তপনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, কাটোয়াতে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে হুমকি দিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন তিনি। ফলে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘিত হয়েছিল। একই অভিযোগ সজলবাবুর বিরুদ্ধেও। এঁদের প্রত্যেককে দিয়েই সংশ্লিষ্ট থানাকে মুচলেকা লিখিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আর যদি মুচলেকা না দেন বা ভবিষ্যতে বিরোধীদের উদ্দেশে গালিগালাজ বা উস্কানিমূলক কথা বলেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
বৃহস্পতিবার এসপি অফিসে জেলার সমস্ত থানার ওসি, সিআই, ডিএসপি, এসডিপিওদের নিয়ে নির্বাচনী বৈঠক ছিল। সেখানে এসপি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ প্রতিটি থানা এলাকায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। কোথাও যদি দেখা যায় পুলিশের কোনও আধিকারিক এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন ঠিক কী চাইছে, ভোটের আগে এবং পরে শান্তি রক্ষায় পুলিশকে ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, তা ওসি পর্যায় পর্যন্ত অফিসারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী বিধিভঙ্গ বরদাস্ত করা হবে না।”
জেলা বামফ্রন্টের তরফে জেলাশাসকের কাছে পেশ করা স্মারকলিপিতে অবশ্য বলা হয়েছে, তৃণমূলের স্বপন দেবনাথ, দোলা সেন, অনুব্রত মণ্ডল ইত্যাদি নেতারা নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করেছেন। তাঁদের দাবি, ২২ দিন হল নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তবু রাস্তাঘাটে, পঞ্চায়েত দফতরে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির প্রদর্শনী চলছে। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অমল হালদারের অভিযোগ, “গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই লাগামছাড়া সন্ত্রাসে আমরা মিটিং মিছিল করতে পারছি না। বেশ কয়েকটি দলীয় দফতর এখনও খুলতে পারিনি। পুলিশও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে।” নির্বাচন কমিশনের কাছেও এই অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
এসপি অবশ্য পুলিশি পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এসপি বলেন, “ভোটের আগে যাঁদের গ্রেফতার করছি বা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বেশিরভাগই তৃণমূলের নেতা বা কর্মী। ফলে পক্ষপাতের অভিযোগ ঠিক নয়।”