ইদিলপুরে ট্রাকের কাগজপত্র খতিয়ে দেখছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
বালি চুরি রুখতে সরাসরি অভিযানে নামলেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। বুধবার অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত-সহ মোটর ভেহিক্যালস দফতর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দুই আধিকারিককে নিয়ে বর্ধমানের ইদিলপুরের বালি ঘাটে হাজির হন তিনি। তার সামনেই অনুমতি ছাড়া একের পর এক বালি বোঝাই ট্রাক পার হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ঘটনাস্থলে পৌঁছোনোর নির্দেশ দেন তিনি। পুলিশের পৌঁছতে অবশ্য এক ঘণ্টা পেরিয়ে যায় বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি।
পরে অভিযান চালিয়ে ১১টি বালি বোঝাই ট্রাক আটক করা হয়। গ্রেফতার করা হয় এক মহিলা-সহ ৮ জনকে। পরে আরও ট্রাক আটক করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সবমিলিয়ে বুধবার মোট ৪০টি ট্রাকের বিরুদ্ধে অবৈধ বালি খাদান থেকে বালি তুলে নিয়ে যাওয়ার মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নৌকোও।
জেলাশাসক বলেন, “মুখ্যামন্ত্রী চাইছেন অবিলম্বে অবৈধ বালি খাদান বন্ধ হোক। বালি বোঝাই বেআইনি ট্রাকগুলির বিরুদ্ধে আমরা অভিযানও চালাচ্ছি। ২০১২ সালে যত ট্রাকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছিল, ২০১৩ সালে তার দ্বিগুনের বেশি ট্রাকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবুও বিভিন্ন নদীর পাড়ে, বিভিন্ন জায়গা থেকে বালি লুঠের খবর পাচ্ছিলাম।”এ দিন কাউকে না জানিয়েই ইদিলপুরে অভিযান চালান জেলাশাসক। সরেজমিনে দেখে তারপরে পুলিশকে খবর দেন।
এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষের বক্তব্য, “জেলাশাসক খবর দেওয়ার পরে আমাদের যেতে কিছুটা দেরি হয়েছে। কারণ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছিল, ফলে পুলিশ পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতেই ব্যস্ত ছিল। আগে খবর পেলে বরং তৈরি থাকতে পারতাম। বড় বাহিনী জোগাড় করে সারাদিনের প্রস্তুতি নিয়েই যেতে হয়েছে আমাদের।”
সৌমিত্র মোহন জানিয়েছেন, নদীতীরের ১০০ মিটার দূরে বালি তোলায় বরাবরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বহু জায়গাতেই ১০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার জলপ্রবাহ রুখে নদীর মাঝবরাবর বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। ফলে পাড় ঘেঁষে জলস্রোত বইতে থাকায় ভূমিক্ষয় ঘটছে। দামোদরের বাঁধও দুর্বল হয়ে পড়ছে অনেক জায়গায়।”
ইদিলপুরেও এমনটাই ঘটছে বলে জেলাশাসকের দাবি। ১৯৭৭ সালে ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে বর্ধমান শহর প্রায় জলের তলায় চলে গিয়েছিল। এরপরে প্রশাসন থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। তবুও নানা ভাবে নদী বাঁধকে বালি উত্তোলনের স্বার্থে দুর্বল করে চলেছে বালি মাফিয়ারা।
জেলাশাসক বলেন, “আমাদের অভিযান একটানা চলবে। নানা বালিঘাটে গিয়ে হানা দেওয়া হবে। সব জায়গায় আমি থাকতে না পারলেও প্রশাসনের আধিকারিকেরা যাবেন। বালি তোলার নাম করে কী চলছে তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা।”
বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “খুব শীঘ্রই জেলা জুড়ে অবৈধ বালির কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। বেআইনি বালি বোঝাই ট্রাক আটক করে একদফা জরিমানা করার পরে তা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আর যে বালি মাফিয়াদের এখনও ধরা সম্ভব হয়নি, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হবে।”
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে জেলা পুলিশের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ, অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত ও বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর বালি বোঝাই ট্রাকগুলির কাগজপত্র খতিয়ে দেখছেন। ট্রাকগুলি টোল কর দিচ্ছে কি না, বালি চালানের বৈধ কাগজপত্র আছে কি না তাও দেখা হচ্ছে।
অভিযানের পরে বুধবার ইদিলপুরের বালি ঘাট বন্ধ করে ফিরে আসে পুলিশ। যে বালিঘাট কেন্দ্র করে অন্তত পাঁচটি খাদান চলে, কয়েকশো লোককে বালি তোলার কাজ করতে দেখা যায়, তা জনশূন্য হয়ে পড়ে অভিযানের পরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy