Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাস নেই, চলল দিনভর দুর্ভোগ

কোথাও বাস না পেয়ে দুর্ভোগ, কোথাও চড়া ভাড়া দিয়ে অন্য গাড়ির খোঁজ, আবার কোথাও ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনে ওঠা- বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ব্রিগেড সভার দিনে এমনই নানা ছবি দেখা গেল জেলা জুড়ে। বর্ধমান সদর, কাটোয়া, কালনা থেকে অধিকাংশ বাস তুলে নেওয়ায় দিনভর দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বর্ধমানের রাস্তাঘাটে বেসরকারি বাস প্রায় ছিল না বললেই চলে। যে দু-একটি বাস চলেছে তাতেও প্রচন্ড ভিড় ছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৪ ২২:০৭
Share: Save:

কোথাও বাস না পেয়ে দুর্ভোগ, কোথাও চড়া ভাড়া দিয়ে অন্য গাড়ির খোঁজ, আবার কোথাও ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনে ওঠা- বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ব্রিগেড সভার দিনে এমনই নানা ছবি দেখা গেল জেলা জুড়ে।

বর্ধমান সদর, কাটোয়া, কালনা থেকে অধিকাংশ বাস তুলে নেওয়ায় দিনভর দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বর্ধমানের রাস্তাঘাটে বেসরকারি বাস প্রায় ছিল না বললেই চলে। যে দু-একটি বাস চলেছে তাতেও প্রচন্ড ভিড় ছিল। অনেকে অবশ্য বাস মিলবে না আন্দাজ করে ট্রেনে যাতায়াত করেন। ফলে ট্রেনেও ভালই ভিড় হয়।

বর্ধমানের ফাগুপুরে আবার তৃণমূল সমর্থকে ভরা ব্রিগেডমুখী একটি বাস দাঁড়িয়ে থাকা লরির পিছনে ধাক্কা মারায় মারামারি বেধে যায়। বৃহস্পতিবার বাসটি কাঁকসার জাতগোড়িয়া থেকে কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশে যাচ্ছিল। ঘটনার পরে বাসযাত্রীরা নেমে ভুষিবোঝাই ওই লরির খালাসি ও চালককে মারধর করেন বলেও অভিযোগ। এমনকী স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদ জানালে বাসযাত্রীরা ভেতর থেকে রড লাঠি বের করে তাঁদের আক্রমন করে বলেও অভিযোগ। এরপরেই মারামারি বেধে যায়। আহত হয়েছেন দু’পক্ষের মোট ৬ জন। তাঁদের মধ্যে স্থানীয় ঢোলনার বাসিন্দা লালন শেখ-সহ দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ দিন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আহত লালনের অভিযোগ, “এক আত্মীয়কে দেখতে নার্সিংহোমে আসব বলে ফাগুপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাস থেকে লোকেরা নেমে হাতের কাছে যাকে পায়, তাকেই মারধর শুরু করে। আমাকেও ঘাড়ে, মাথায় লোহার রড দিয়ে মারে।” জাঠগারিয়ার আহত তৃণমূল সমর্থক শেখ ইসমাইলের আবার দাবি, “আমাদের বাসটি ভুষিবোঝাই ট্রাকটিকে ধাক্কা মারলে আমরা ট্রাকের ড্রাইভারকে ধমক দিতে শুরু করি। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন আমাদের মারধর করতে শুরু করেন। আমাদের বাসটিরও ভাঙচুর করা হয়েছে।”

ঘটনার খবর পেয়ে বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে যান। তাঁর সঙ্গে থাকা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক কনস্টেবলও গোলামাল থামাতে গিয়ে মার খান বলে অভিযোগ। তাঁর ঘাড়ে-মাথায়-পায়ে চোট লাগে। এরপরে বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায় বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোলে দু’পক্ষ পালিয়ে যায়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে থানা সূত্রে জানা গিয়েছে।

কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৬০ শতাংশের উপর বাস তুলে নেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে মোটরভ্যান, মালবাহী গাড়িতে যাতায়াত চলে। দূরপাল্লার বেশিরভাগ গাড়ি তুলে নেওয়ায় সিউড়ি-বোলপুর-কৃষ্ণনগর-বহরমপুর রুটের যাত্রীরাও সমস্যায় পড়েন। যাত্রীদের দাবি, সুযোগ বুঝে ছোট মালবাহী গাড়িগুলি অনেক বেশি ভাড়া নিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় রুটের যাত্রীরা। কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডের কর্মীরা জানান, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাস না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন যাত্রীরা। তারপর হতাশ হয়ে বিকল্প রাস্তা খুঁজে বাসস্ট্যান্ড ছাড়েন।

কালনা বাসস্ট্যান্ড চত্বরও এ দিন ছিল সুনসান। বৈঁচি, বর্ধমান, পাণ্ডুয়া, মেমারি এবং নবদ্বীপ রুটে এমনিতেই ভরসা বেসরকারি বাস। তার মধ্যে বেশিরভাগই তুলে নেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। তিন-তার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে বাস পেয়েছেন অনেকে। ভরসা ছিল মোটরভ্যান। যাত্রীদের অভিযোগ, এ দিন তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া নিয়েছে মোটরভ্যানগুলি। মেমারির শঙ্করপুর এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর চৌধুরি বলেন, “সাত সকালে কালনায় কাজে এসেছিলাম। কাজ মেটার পর বাসস্ট্যান্ডে এসে শুনি, কালনা মেমারি ভায়া বাঘনাপাড়া রুটে বাস চলছে মাত্র তিনটি। ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষা করার পর শেষ পর্যন্ত বাস পেলাম।” লোকাল ট্রেনগুলিতেও এ দিন সকাল থেকেই ভিড় ছিল। বেশির ভাগ যাত্রীদের গন্তব্যস্থল ছিল ব্রিগেড। কালনা জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১১টার পর থেকে বেশ কিছু ট্রেনে প্রচুর ভিড় ছিল। বেশির ভাগ যাত্রীই ব্রিগেডে যাওয়ার জন্য ট্রেনে ওঠেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE