Advertisement
০২ মে ২০২৪

বড় হওয়ার শুরু মাঘী পঞ্চমীতে

শীতে কাঁপতে কাঁপতে পুজোর সময় থেকে ঠিক করে রাখা মায়ের নতুন শাড়ি, খোলা চুল, এদিক-ওদিক চোখ আর বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলের পথে- সরস্বতী পুজো মানেই পাড়ার অলিগলি থেকে বড় রাস্তা সর্বত্র একই ছবি।

প্রতিমা কিনে বাড়ির পথে। ছবি: শৈলেন সরকার।

প্রতিমা কিনে বাড়ির পথে। ছবি: শৈলেন সরকার।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

শীতে কাঁপতে কাঁপতে পুজোর সময় থেকে ঠিক করে রাখা মায়ের নতুন শাড়ি, খোলা চুল, এদিক-ওদিক চোখ আর বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলের পথে- সরস্বতী পুজো মানেই পাড়ার অলিগলি থেকে বড় রাস্তা সর্বত্র একই ছবি।

তবে ব্যস্ততা শুরু হয়ে দিন সাতেক আগে থেকেই। আর আগের দিন তো নাওয়া-খাওয়ারও সময় থাকে না পড়ুয়াদের। সোমবার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল ঘুরেও তাজা হয়ে গেল এমনই কিছু মূহূর্ত।

দুপুর সাড়ে ১২টা। অন্ডাল গালর্স স্কুলে আলপনা দেওয়ার প্রায় সারা। চলছে শেষ মুহুর্তের সাজানো। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তপতী ভট্টাচার্য জানান, পুজোর আয়োজনে মেয়েদের উৎসাহ দেখার মতো। ওদের সঙ্গে থাকলে নিজের জীবনের ওই সময়টা যেন ফের ফিরে আসে।

দুপুর আড়াইটা। গ্যামন ব্রিজের কাছ থেকে সরস্বতী প্রতিমা নিয়ে রিকশা ভ্যানে সওয়ার চার কিশোরী। ডিপিএল গালর্সের ওই চার পড়ুয়ার মুখে অনেক খুঁজে মনের মতো প্রতিমা মেলার খুশি। তাদেরই একজন দীপশিখার কথায়, “ভালো মূর্তির যা আকাল এবার!”

সত্যি। মনের মতো মূর্তি না মিললে পুজোয় আনন্দ নেই, এমনটাই মনে করে স্কুল পড়ুয়ার দল। সে ছাত্র হোক বা ছাত্রী। সবার একই মত। কাঁকসার সিলামপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির এক পড়ুয়ার কথায়, “সবাই ভিড় করে আমাদের ঠাকুর দেখবে। আলোচনা করবে। তবেই তো মজা।”

এতো গেল বাইরের আয়োজনের কথা। কিন্তু ভেতরের ধুকপুকের কথা তো আর প্রকাশ্যে বলা যায় না। সারা বছরের বাধা নিষেধ আলগা হয়ে যায় এই সময়। ছাত্রেরা নিমন্ত্রণ করতে হাজির হয় মেয়েদের স্কুলে। চলে উল্টোটাও। বাড়িতে সরস্বতী পুজোর বিশেষ দায়িত্ব না নিতে হলেও নবম শ্রেণিতে ওঠার পরে স্কুলে সরস্বতী পুজোর আয়োজনের দায়িত্ব পেয়ে হঠাৎই যেন অনেকটাই বড় হয়ে যায় ছেলেমেয়েরা। বাবা-মায়ের ছায়ার বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে পুস্পাঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ জীবনে প্রথম আসে। রঙবেরঙের শাড়িতে প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়ায় কিশোরীরা। প্রজাপতির পিছু পিছু চোখ ঘোরে সদ্য গোঁফ ওঠাদেরও।

কয়েকবছর আগেও যখন শহরে মাল্টিপ্লেক্স বা শপিং মলের ভিড় হয়নি, তখন বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ছিল এই দিনটাই। এখনও অনেকটাই তাই। কিন্তু স্কুলের গেটের এপার আর ওপারের জায়গা নিয়েছে মাল্টিপ্লেক্সের মুখোমুখি চেয়ারে দু’কাপ কফি।

কো-এডুকেশন স্কুলে অবশ্য অন্য ব্যাপার। সেখানে ক্লাসের সহপাঠীরা দল বেঁধে এই স্কুল থেকে ওই স্কুল ঘুরে ঠাকুর দেখে। দুর্গাপুরের বিদ্যাসাগর মডেল স্কুলে সরস্বতী পুজোর দিনেই পুরস্কার বিতরণি অনুষ্ঠান হয়। দুপুরের মেনু খিচুড়ি। সরস্বতী পুজোর হুল্লোড়ের মাঝে পুরস্কার পাওয়াটা যেন বোনাস।

তবে এ সব তো রয়েইছে। চিন্তা শুধু একটাই। শেষ মাঘে শীতের যা দাপট তাতে শুধু শাড়িতে সামলাবে তো? না হলে ফ্যাশন এক্কেবারে অক্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saraswati puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE