Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bayron Biswas and Nawsad Siddique

বাইরনে অস্বস্তি বামে, স্বস্তি সেই নওসাদই

বাইরনের দলবদল-জনিত পরিস্থিতিতে বামেদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর অবস্থান। বাইরনের আগে বামেদের সমর্থনেই জয়ী হয়েছিলেন নওসাদ।

Bayron Biswas and Nawsad Siddique.

বাইরন বিশ্বাস এবং নওশাদ সিদ্দিক্কি। ফাইল চিত্র

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ০৭:২৭
Share: Save:

সাগরদিঘির বাইরন বিশ্বাসের দল বদলানোর জল গড়াচ্ছে নানা দিকেই। ভিতরে এবং বাইরে।

লোকসভা নির্বাচনকে সামনে সার্বিক বিরোধী ঐক্যের মহড়া চলছে এখন। পটনায় আগামী ১২ জুন বিজেপি-বিরোধী দলগুলির বৈঠক বসছে, যেখানে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস দু’দলেরই থাকার কথা। সেই সময়ে কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ককে দলে টেনে তৃণমূল প্রকৃত পক্ষে বিজেপিরই সুবিধা করে দিচ্ছে বলে সরব এআইসিসি নেতৃত্বও। অন্য দিকে আবার সার্বিক বিরোধী ঐক্যের মধ্যে থেকেও বাইরনের এমন কাণ্ডে বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতার ক্ষেত্রেও কিছু অস্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।

আসন সমঝোতা করে লড়লেও একেবারে তৃণমূল স্তরে বাম ও কংগ্রেসের ভোট-কেন্দ্রিক সমীকরণ নিয়ে কিছু প্রশ্ন অনেক দিন ধরেই আছে। বাম শিবির মনে করে, যে সব আসনে কংগ্রেস লড়াই করে, সেখানে বাম কর্মীরা পূর্ণ শক্তিতে জোটের প্রার্থীর জন্য ময়দানে নামেন। কিন্তু যেখানে বামেদের প্রার্থী থাকে, সেখানে কংগ্রেসের তরফে একই রকম উদ্যোগ দেখা যায় না। আসন সমঝোতা করে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার পরে বামেদের চেয়ে কংগ্রেসের বেশি বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া এবং বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসের দিকে যাওয়ার অন্যতম কারণ এটাই বলে বাম শিবিরের মত। সাগরদিঘির বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম সমর্থনে জিতে কংগ্রেস প্রার্থী তিন মাসের মধ্যেই তৃণমূলে চলে গিয়েছেন, তা-ও যখন আবার শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক প্রশ্নে জোরদার আন্দোলন চলছে। স্বভাবতই এর জেরে বাম শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, জোটের জন্য খেটে লাভ কী!

সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘আমাদের মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে সাগরদিঘির জন্য প্রার্থী বেছেছিল। তার পরে কংগ্রেস বাইরন বিশ্বাসের নাম ঠিক করে ফেলে আমাদের সমর্থন চেয়েছিল। এই মনোভাব নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যে প্রশ্ন থাকলেও তৃণমূল ও বিজেপিকে হারিয়ে একটা বার্তা দেওয়া জরুরি, এটা মাথায় রেখে কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়েছিল। সেই কংগ্রেস প্রার্থীই জিতে এ ভাবে তৃণমূলে চলে গেলে বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কিছু প্রশ্ন জাগবেই।’’ বাম শরিকদের একাংশ এমনিতেই কংগ্রেসের হাত ধরার পক্ষপাতী নয়। বাইরন-কাণ্ডে তারাও রসদ পেয়েছে। আরসিপিআই নেতা মিহির বাইন যেমন বলছেন, ‘‘যাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রেণি সংগ্রাম করা যায় না, সেই রকম দক্ষিণপন্থী দলের সঙ্গে প্রাক্-নির্বাচনী সমঝোতার পরিণতি কী হতে পারে, আবাপ বোঝা গেল!’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশও মানছেন, বামেদের তরফে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।

লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই দু’দলের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য অস্বস্তি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’টো দলকে পরাস্ত করার লক্ষ্যেই বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতার কৌশলগত সিদ্ধান্ত। সাগরদিঘিতে মানুষ সেই অবস্থানের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এক জন বিধায়ক ব্যক্তি হিসেবে দল বদল করলেও অবস্থানটা দুর্বল হয়ে যায়নি। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করার কাজই করবে সিপিএম।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও মত, ‘‘তৃণমূলের কাজকর্ম পরোক্ষ ভাবে বিজেপিকেই সাহায্য করছে। এই দুই দলের বিরুদ্ধে রাজ্যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একত্রে লড়াই চালাতে হবে।’’

বাইরনের দলবদল-জনিত পরিস্থিতিতে বামেদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর অবস্থান। বাইরনের আগে বামেদের সমর্থনেই জয়ী হয়েছিলেন নওসাদ। এখন ক্যানিং, ভাঙড়ে নিয়মিত শওকত মোল্লা, আরাবুল ইসলামদের বিরুদ্ধে লড়েও নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন আইএসএফ বিধায়ক। বাইরন যে সব যুক্তি দেখিয়ে তৃণমূলে গিয়েছেন, তার বিরোধিতা করে নওসাদ বলছেন, ‘‘মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে আমাকে জিতিয়েছিলেন। ভাঙড়ের মানুষের সেই মতামতকে মর্যাদা দিয়েই আমি বিধানসভায় নিজের দায়িত্ব পালন করি। সেই জনাদেশ নিয়েই চলতে চাই। মানুষের বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Bayron Biswas TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE