প্রতীকী ছবি
দফতরে ঢুকে বিডিওকে পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। মার খেয়েছেন ওই আধিকারিকের দেহরক্ষী-সহ দফতরের আরও কয়েক জন কর্মী। অফিসের সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক কেড়ে নেয় হামলাকারীরা। সন্ধের পরে অসুস্থ বিডিও-সহ দু’জনকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বিডিও অফিসের কর্মীরা। অপরাধীরা গ্রেফতার না হলে আজ, শুক্রবার তাঁরা অফিসে যাবেন না বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিগ্রহের এই ঘটনাটি ঘটেছে সন্দেশখালি-২ বিডিও দফতরে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে হামলাকারীরা তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। কর্মীদের একটি ঘরে ঢুকিয়ে মারধর করা হয় বিডিও কৌশিক ভট্টাচার্যকে। অভিযোগ, একশো দিনের প্রকল্প আধিকারিক অভিজিৎ মণ্ডলের পেটে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁর কাছ থেকে সিসি টিভির ঘরের চাবি কেড়ে নেয় হামলাকারীরা। হার্ডডিস্ক নষ্ট করা হয়। অভিজিৎকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। প্রহৃত হন কৌশিকের দেহরক্ষী বিদ্যুৎ সরকারও। কৌশিক এবং অভিজিৎ বসিরহাট সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কৌশিকের মাথায় ফুলদানি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি চোখে দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁর মাথার ‘সিটি স্ক্যান’ করানো হয়েছে।
গোটা ঘটনার কথা বসিরহাটের মহকুমাশাসককে জানিয়েছেন বিডিও ও তাঁর দফতরের কর্মীরা। পুলিশের কাছেও অভিযোগও দায়ের করেছেন। মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘কিছু লোক অফিসে ঢুকে আমাদের দুই সহকর্মীকে মারধর করেছে। বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।’’ বিডিওর অভিযোগ, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন বেড়মজুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা হাজি সিদ্দিক মোল্লা। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমি এলাকায় ছিলামই না। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
দলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত বলে মানতে চাননি তৃণমূল জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি আধিকারিকের উপরে হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। পুলিশ অপরাধীদের ধরুক।’’
কেন এই হামলা? ব্লক প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ‘মৌচাকে ঢিল’ মেরেছিলেন বিডিও। বিডিও বলেন, ‘‘শাসক দলের কিছু নেতার অন্যায় আবদার না রাখতে পারায় এমন ভাবে মারধর করা হল।’’
ব্লক প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, হামলাকারীরা বলছিল, বিডিও বিজেপির প্রতি পক্ষপাত করছেন। পদ্মশিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সে কথা অবশ্য মানেননি বিডিও। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলরাজ, দুর্নীতি এ সব বন্ধ করতে চেয়েছিলাম বলেই এই অবস্থা।’’
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কিছু দিন ধরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন বিডিও। প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনা প্রকল্পে বড়সড় দুর্নীতি নজরে এসেছিল তাঁর। জেলা প্রশাসনকে বিডিও জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেওয়া হলেও সেই টাকায় ঘর পাননি গরিব মানুষ। বিডিওর অভিযোগের সারবত্তা ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জেলা প্রশাসনেরও নজরে আসে। জেলাশাসকের দফতরে এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়। সেখানে জেলা তৃণমূল নেতাদেরও ডাকা হয়েছিল। পরে জেলাস্তরের এক শীর্ষ নেতার কথা মতো তিন দফায় বেশ কিছু টাকা প্রশাসনকে ফেরত দিয়েছিলেন সন্দেশখালি ২ এলাকার এক তৃণমূল নেতা। সেই টাকা জমাও পড়ে ব্যাঙ্কে।
ফণীর পরে পঞ্চায়েতের কাছ থেকে বিডিও দফতরে ত্রাণ বাবদ বেশ কিছু টাকার বিল পেশ করা হয়েছিল। সেই টাকার অঙ্কেও গরমিল টের পেয়েছিলেন বিডিও। বাঁধ সারাইয়ে টাকার দাবি করা হলেও আদৌ বাঁধ মেরামত হয়নি বলে খবর পান বিডিও। বুধবারই তিনি সন্দেশখালির বাঁধ মেরামতির হাল দেখতে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy