Advertisement
E-Paper

‘বাংলাদেশি’ চিহ্নিতকরণে বাধা মমতা, তোপ বিজেপির! এখানে নাটক করছেন কেন? অনুপ্রবেশ শাহের ব্যর্থতায়, পাল্টা তৃণমূল

জগন্নাথের কথায়, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি না, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিদেশি কোনও রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে কোনও পদক্ষেপ করবেন। কিন্তু কাকতালীয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কলকাতা থেকে দিল্লি ফিরে যাওয়ার পর দিনই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জোর দিয়ে উত্থাপন করেছেন।’’

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ১৯:২৬
Bengal BJP attacks Mamata on allegation of defending illegal Bangladeshi immigrants, AITC gives rebuttal by calling infiltration a failure of Shah

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

‘ভোটব্যাঙ্ক’ অক্ষুণ্ণ রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বৈধ নাগরিকদের সঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের গুলিয়ে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ করল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন। রাজ্যের প্রধান বিরোধীদলের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের বৈধ বাসিন্দা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ‘এক দাগে দাগিয়ে দিয়ে’ মুখ্যমন্ত্রী আসলে অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দিতে চাইছেন। পাল্টা তোপ দেগে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যেমন পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়ছে, তেমনই ত্রিপুরাতেও ধরা পড়ছে। তা হলে এই অবৈধ অনুপ্রবেশে কার দায়? অমিত শাহের হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অনুপ্রবেশ রুখতে পারছে না কেন?’’ কুণালের তোপ, ‘‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে অমিত শাহের মন্ত্রকের ব্যর্থতায়। ওঁরা অমিত শাহকে প্রশ্ন করুন। এখানে নাটক করছেন কেন?’’

জগন্নাথের বক্তব্য, ‘‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর যে নীতি ভারত সরকার নিয়েছে, তা ফলপ্রসূ করার জন্য বাকি রাজ্যগুলির যে কাজ, তাকে খাটো করতে রাজ্য সরকার এবং নিজের দলকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’’ ভারতে বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত আসার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম সফর করেছেন কলকাতায়। তিনি নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ ভাবে খবর রয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ভারতীয় নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশের তরফে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর এক অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে বিষয়টি দেখার জন্য।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি না, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিদেশি কোনও রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে কোনও পদক্ষেপ করবেন। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দিল্লি ফিরে যাওয়ার পরদিনই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জোর দিয়ে উত্থাপন করেছেন।’’

বিজেপি নেতার এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য প্রসঙ্গে আবার কুণাল বলেছেন, ‘‘একদম মাথামুন্ডুহীন কথাবার্তা! নিজের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নজর ঘোরাতে এই সব কথা বলছেন। যেহেতু জগন্নাথের বিরুদ্ধে একটা গুরুতর অভিযোগ ওঁর নিজের দলের মধ্যেই ঘুরছে, তাই সে দিক থেকে নজর ঘোরাতে তিনি এ সব কথা বলছেন।’’

জগন্নাথের দাবি, অন্যান্য রাজ্য অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার বিরোধিতা করছে। বিজেপির দাবি, ইতিমধ্যেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ২৫ হাজারের মতো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জগন্নাথের তথ্য, সবচেয়ে বেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এখনও পর্যন্ত খুঁজে বার করেছে তামিলনাড়ু এবং কেরল সরকার। দু’টিই বিজেপি পরিচালিত নয়। বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘ওই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ড উদ্ধার হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া কার্ডের অধিকাংশই উত্তর ২৪ পরগনা থেকে তৈরি করা হয়েছে।’’

আদালতের নির্দেশে দিল্লিতে ‘অবৈধ’ ঘোষিত যে কলোনি থেকে সম্প্রতি ২৬ জন অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত হয়েছেন, সেই কলোনির সঙ্গে জগন্নাথ কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন গুলশন কলোনির তুলনা টেনেছেন। ওই সব এলাকায় জনসংখ্যার তুলনায় আধার কার্ডের সংখ্যা অনেক বেশি বলেও বিজেপি নেতার দাবি। তিনি জানান, বিহারের কিষেণগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার এবং পূর্ণিয়ায় জনসংখ্যার সঙ্গে আধারের সংখ্যা যেমন মিলছে না, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাট-গোপালপুর, রাজারহাট নিউটাউন, বারুইপুর পূর্ব, বারুইপুর পশ্চিম-সহ বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে জনসংখ্যার চেয়ে আধারের সংখ্যা বেশি। ওই অতিরিক্ত আধার কার্ড কোথা থেকে এল, কাদের নামে তৈরি হল, তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন, সে সবই চিহ্নিত হওয়া জরুরি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া আটকাতে চাইছেন বলে তাঁর অভিযোগ।

বিজেপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি জনসংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লক্ষ। কিন্তু ওই বয়সিদের নামে আধার কার্ডের সংখ্যা ৭ কোটি ৬০ লক্ষ। অর্থাৎ, এখানেই ৩০ লক্ষ অতিরিক্ত আধার কার্ডের হদিস পাওয়া যাচ্ছে। জগন্নাথ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানকে এবং বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া হিন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে সমান করে দিচ্ছেন। সবাইকে এক দাগে দাগিয়ে দিয়ে তিনি অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দিতে চাইছেন।’’

infiltration Bangladeshi Infiltration West Bengal Politics CM Mamata Banerjee Amit Shah Jagannath Chatterjee Kunal Ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy